মধ্যপ্রদেশের গুনায় দলিত দম্পতির বিষ খাওয়াকাণ্ডে দুই মহিলা কনস্টেবল-সহ মোট ছ’জনকে সাসপেন্ড করা হল। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই গুনা জেলার জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন ও পুলিশ সুপার তরুণ নায়েককে বুধবারই বদলি করা হয়।
মঙ্গলবার সরকারি জমিতে জবরদখল তুলতে গিয়েছিলেন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা। সঙ্গে ছিল পুলিশ। কিন্তু জমির জবরদখল তোলাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা শুরু হয়। পুলিশের সামনে কীটনাশক খেয়ে নেন দলিত কৃষক দম্পতি। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে ওই দম্পতির উপর লাঠিচার্জ করছে পুলিশ।
ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকদের অভিযোগ, সরকারি কলেজের জন্য় বরাদ্দ জমির ৪৫ বিঘায় সোয়াবিনের চাষ করতেন রামকুমার আহিরওয়ার এবং তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী। মৃতদের আত্মীয়দের দাবি, গাব্বু পারধির থেকে ওই জমি লিজ নিয়েছিলেন রামকুমার ও তাঁর স্ত্রী। সোয়াবিন চাষের জন্য লোনও নেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, পুলিশ তাঁদের উৎখাত করতে এলে কয়েকদিন সময় দেওয়ার দাবি করেছিলেন ওই দলিত কৃষক দম্পতি। তাঁরা বলেনছিলেন যে ফসল ফলানো পর্যন্ত তাঁদের সময় দেওয়া হোক।কিন্তু রামকুমার এবং তাঁর স্ত্রীর কোনও কথা না শুনেই তাঁদের বেধড়ক মারতে শুরু করে পুলিশ। কিন্তপ সেই আবেদনে কান না দিয়েই ক্ষেতের উপর বুলডোজার চালিয়ে ফসল নষ্ট করে দেয় সরকারি কর্মীরা। যা সহ্য করতে না পেরে পুলিশেরউপস্থিতিতেই ঘর থেকে কীটনাশক নিয়ে এসে খেয়ে নেন সাবিত্রী। একই কাজ করেন রামকুমারও।
সরকারি আধিকারিকদের অভিযোগ, অচৈতন্য দলিত দম্পতিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু পথ আটকায় রাজকুমারের ভাই শিশুপাল ও অন্যান্যরা। যা সরাতেই লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, দলিত দম্পতির বাচ্চারা অচৈতন্য মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। অন্যদিকে শিশুপাল ও অন্যদের বিরুদ্ধে লাঠিপেটা করছে পুলিশ। যা প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে মধ্যপ্রদেশের পুলিশ এবং সরকার।
বিরোধী কংগ্রেস শাসক দল বিজেপিকে তোপ দেগে বলেছেন, 'এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট যে মধ্যপ্রদেশে জঙ্গলরাজ চলছে।' মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম সিং জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নির্দেশে গোটা ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে।
গওয়ালিয়রের আইজিল ও কালেক্টরের থেকে আগামী তিন সপ্তাগের মধ্যে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেছে মানবাধিকার কমিশন।
আজ রাজ্যের প্রাক্তন দুই মন্ত্রী বালা বচ্চন জয়বেন্দ্র সিংয়ের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কংগ্রেস প্রতিনিধি দল গুনায় যাবেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দম্পতির সঙ্গে দেখা করে দেড় লাখ টাকার চেক তুলে দেবেন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নিম্নমানের রাজনীতির অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ভি ডি শর্মার দাবি, এই ঘটনা জাতি ভৈষম্যের কোনও বিষয় নয়। এটা নিছক জবরদখলকারী ও জবরদখনকারীদের মুক্ত করতে গিয়ে সরকারি আধিকারিকদের বিষয়।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন