কামাখ্যা মন্দির চত্ত্বরে এক মহিলার মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য। পাঁচ বছর আগের ঘটে যাওয়া সেই ভয়ঙ্কর খুনের ঘটনায় এবার সাফল্য পেল পুলিশ। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৯ সালের সেই ঘটনার নৃশংসতায় কেঁপে ওঠে সারা দেশ। গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির চত্বরে একজন মহিলার মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধারের পরই পুলিশের সন্দেহ মহিলাকে নরবলি দেওয়া হয়। মহিলার দেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় কিছু পূজা সামগ্রী। ১৯শে জুন, ২০১৯ সালে পুলিশকে ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়। এফআইআরও দায়ের করা হয়। এরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। দীর্ঘ চারবছর তদন্ত চালিয়ে অবশেষে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা পুলিশ।
গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, মৃত শান্তি শাউয়ের ছেলে মিডিয়া রিপোর্টের মাধ্যমে ঘটনার কথা জানতে পেরে জামাকাপড় এবং শরীরে থাকা ট্যাটু থেকে মৃতদেহটিকে তার মায়ের বলে শনাক্ত করেন এবং পুলিশকে জানান যে তিনি ২০১৯ সালের জুনের শুরুতে তার মা অম্বুবাচী মেলার উপলক্ষে কামাখ্যা মন্দিরে আসেন এবং তারপর থেকে মা নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এক তান্ত্রিক এবং আরও দুই মহিলার সঙ্গে ওই মহিলা বাংলা থেকে থেকে কামাখ্যা মন্দিরে আসেন।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে একটি বিশেষ দল সম্প্রতি অতীতের প্রমাণ এবং সূত্রগুলি বিশ্লেষণ করে কোচবিহারে পৌঁছায় এবং ১৮ মার্চ, ২০২৩-এ কৈলাশ বর্মন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় মহিলার মোবাইল ফোন, জামাকাপড় এবং আধার কার্ড। ওই ব্যক্তি তদন্তে পুলিশকে জানায় এই জিনিসগুলি ২০১৯ সালের জুন মাসে এক 'সাধুবাবা', তার বাড়িতে রেখে যান। সেই সূত্র ধরে পুলিশ ২৫শে মার্চ মধ্যপ্রদেশের জবলপুর থেকে মাতা প্রসাদ পান্ডে ওরফে মাতেশ্বরী গিরিকে গ্রেফতার করে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে ওই মহিলা নরবলি দেওয়ার প্ল্যান অনেক আগেই করা হয়। সেই মত ২০১৯ সালের ১৮ এবং ১৯ শে জুন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সেখানে মহিলা ছাড়াও আরও ১২ জন ছিলেন। মহিলাকে আকন্ঠ মদ্যপান করানো হয়। এরপর নতুন শাড়ি পরিয়ে কম্বলে শুইয়ে হাত মা ধরে রেখে নরবলি দেওয়া হয়। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ ১লা এপ্রিল, সুরেশ পাসওয়ান (৫৬), প্রদীপ পাঠক ওরফে দীনেশ বা রাজু (৫২) এবং আরও দুই ব্যক্তি, কানু আচার্য্য ওরফে কানু তান্ত্রিক (৬২), এবং রাজু বাবা (৬০)কে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, দলের প্রত্যেকে প্রথমে ভূতনাথ মন্দিরে একটি পুজোর আয়োজন করে, যেখানে সবাই মদ্যপান পান করে্ন এবং মহিলাকে জোর করে আকন্ঠ মদ্যপান করানো হয়। এরপর কামাখ্যা শ্মশানে গিয়ে আরেকটি পুজো করা হয় এবং তৃতীয় পুজোটি হয় জয় দুর্গা মন্দিরে।
জয় দুর্গা মন্দিরে, মহিলাকে তার শাড়ি বদল করতে বাধ্য করা হয়। তারপরে তাকে কম্বলের উপর শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং মহিলার হাত-মা ধরে তার শিরশ্ছেদ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার কাটা মুণ্ডু এরপর ব্রহ্মপুত্র নদীতে ফেলে দেয় তারা। এই মামলার বাকি আসামীদের খোঁজে জোর তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।