Advertisment

হিজাবের পর বিতর্কে হালাল বয়কট, কর্নাটকে বিক্ষোভ ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে

হালাল মাংস বয়কটের দাবিতে দক্ষিণী রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার চালাচ্ছেন বজরং দলের কর্মীরা। যা ঘিরে মাঝেমধ্যেই হিংসার অভিযোগ উঠছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
halal boycott campaign gathers pace in Karnataka

বাড়ছে হালাল মাংস বয়কটের দাবি।

হালাল মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার দাবি বাড়ছে কর্নাটকে। রাজ্যের শিবমোগা জেলার ভদ্রাবতীতে বজরং দলের কিছু কর্মী গত বুধবার একটি হোটেলে ঢুকে সেখানকার এক কর্মীকে লাঞ্ছিত করেছে। পরের দিন, বৃহস্পতিবার শহরের একজন হোটেল মালিককে হালাল মাংস ব্যবহারের জন্য অতি ডানপন্থীদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই সময় উপস্থিত এত গ্রাহক হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে তাঁর উপরও চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ সুপার বিএম লক্ষ্মী প্রসাদ শুক্রবার দাবি করেছেন যে, ওই ঘটনায় পাঁচজন বজরং দলের কর্মীকে গ্রেফতা করা হয়েছে।

Advertisment

অতি ডানপন্থী নেতা প্রশান্ত সাম্বারগি এবং পুনিথ কেরেহাল্লি বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর চামরাজপেট এলাকার একটি বাজারে গিয়ে হালাল মাংস বিক্রির বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে গিয়েছিলেন। হালাল মাংস না কেনার জন্য লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ওই দু'জনের বিরুদ্ধে সরব হয় এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি না করার অনুরোধ করেন।

হিজাব বিতর্ক এবং মন্দির চত্বরে বা পুজোর মেলায় স্টল স্থাপনে মুসলিম ব্যবসায়ীদের উপর ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা জারির চাপ বাড়ছে। তার মধ্যেই মাথাচাড়া দিচ্ছে হালাল বিতর্ক। অতি ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন অংশে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে এবং লোকেদের শুধুমাত্র "হিন্দু দোকান" থেকেই মাংস কেনার জন্য অনুরোধ করছেন।

ডানপন্থী অতি হিন্দত্ববাদী দলগুলো হালাল মাংসের বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রচার শুরু করেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি, শ্রী রাম সেনে এবং বজরং দলের মতো সংগঠনগুলি মাংসের দোকানের সাইনবোর্ড থেকে হালাল শংসাপত্র অপসারণের আহ্বান জানানোর পরে বিক্ষোভ গতি পয়েছে।

শ্রী রাম সেনের প্রতিষ্ঠাতা প্রমোদ মুথালিক অভিযোগ করেছেন যে, হালাল পণ্য বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থ জেলে থাকা সন্ত্রাসীদের জামিনের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। ২৯ শে মার্চ, বিজেপির জাতীয় সম্পাদক এবং চিকমাগালুর বিধায়ক সিটি রবি দাবি করেছিলেন যে, হালাল মাংস বিক্রি আসলে 'অর্থনৈতিক জিহাদ'। বিজেপি নেতা রাভির কথায়, 'মুসলিমরা শুধুমাত্র তাদের সম্প্রদায়ের লোকেদের থেকেই মাংস কেনে এবং হালাল তাদের জন্য একটি সার্টিফিকেশন। এমনভাবে বলা হয় যে, মাংস যেন শুধুমাত্র মুসলমানদের কাছ থেকেই কেনা উচিত। মুসলমানরা যদি হিন্দুদের কাছ থেকে মাংস কিনতে অস্বীকার করে, তাহলে হিন্দুদের শুধু হিন্দুদের কাছ থেকেই মাংস কিনতে বলায় বাধা দেওয়ার কারণ কী?'

২রা এপ্রিল উগাদিতে কন্নড় নববর্ষ উৎসবের আগে হালাল বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। নবর্ষের পরের দিন, বর্ষাদোদাকু নামে পরিচিত। সেদিন অনেক হিন্দু মাংস খায়। মাংস বিক্রেতাদের দাবি, সেদিন তাদের বিক্রি বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ওই দিন প্রায় ২ লাখ টাকার টার্নওভারের আশা করে।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার হালাল মাংস বয়কট করার দাবিটি খতিয়ে দেখছে। একইসঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এই বিক্ষোভ ঘিরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। ফলে এখনই প্রশাসনের পক্ষে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই বুধবার বলেছেন যে, তিনি হালাল মাংসের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন। সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন , 'পুরো বিষয়টি ভালো করে জানতে হবে। হালাল বিরোধী বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। এসব ঘটনার পরও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অটুট রয়েছে। অনেকেই বিক্ষোভকারীদের মদত দিচ্ছে, আমরা জানি কী করতে হবে এবং কী করতে হবে না।'

রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগা জ্ঞানেন্দ্র দাবি করেছেন যে, এই বিষয়ে সরকারের একটি সীমিত ভূমিকা রয়েছে কারণ "হালাল খাদ্য বয়কট" করার ডাক আইন-শৃঙ্খলার আওতায় আসে না এবং এটি একটি সম্প্রদায়ের বিশ্বাস এবং অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে তিনি সাফ বলেছেন যে, 'আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হলে, আইন তার নিজস্ব ছন্দে এগোবে।'

তবে কসাইদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে যে, তারা হিন্দু ডানপন্থীদের বিক্ষোভ নিয়ে চিন্তিত নন। কারণ যে কোনো মানুষই দিনের শেষে ভালো ও স্বাস্থ্যকর মাংস খেতে চায়। এতে বাধাদিলে পাল্টা প্রতিরোধ হবে।

Read in English

bjp karnataka Bajrang Dal Halal
Advertisment