যোগী সরকার অবিলম্বে হালাল শংসাপত্র-সহ পণ্য বিক্রির ওপর উত্তরপ্রদেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) লখনউয়ের হজরতগঞ্জ থানায় একটি এফআইআর দায়েরের পর এমনটা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, 'কিছু কোম্পানি একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের বিক্রি বাড়ানোর জন্য পণ্যগুলোকে হালাল বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে। আর, এভাবে জনগণের বিশ্বাস নিয়ে খেলছে!' এই কাহিনি জানার পর, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন হালাল আবার কী! এর সার্টিফিকেটই বা কে দেয়?
'হালাল' কী?
হালাল একটি আরবি শব্দ। ইংরেজিতে যার অর্থ 'অনুমতিপ্রাপ্ত'। আর, হারাম- এর অর্থ 'নিষিদ্ধ'। শব্দটি বিশেষ করে ইসলামিক বিশ্বাস অনুযায়ী খাদ্যতালিকার সঙ্গে যুক্ত। হালাল অর্থ এমন খাবার, যা ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী সংগ্রহ করা, প্রক্রিয়াজাত করা এবং ব্যবসা করা হচ্ছে। এমন অনুমোদিত খাদ্যতালিকা ইহুদিরাও অনুসরণ করে। সেই বিশ্বাস অনুযায়ী, 'কোশার' অর্থাৎ ইহুদি আইনে অনুমোদিত খাদ্য গ্রহণ করার রেওয়াজ আছে। খাবারের যেগুলো সাধারণত হারাম বা হালাল না-বলে বিবেচনা করা হয়, তা হল শুকরের মাংস (শুয়োরের মাংস) এবং নেশা (অ্যালকোহল)। এমনকী, শুয়োরের মাংস নয় এমন মাংসকেও হালাল হতে গেলে তাদের উত্স সম্পর্কিত নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন, প্রাণীটিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, কীভাবে তা প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে, এই সব শর্ত মানা হালাল হওয়ার জন্য জরুরি।
মাংস কখন হালাল?
ভারতীয় ভাবনায় হালাল সাধারণত মুসলমানদের দ্বারা ব্যবহৃত জবাইয়ের কৌশল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে জগুলার শিরা, ক্যারোটিড ধমনী (যা মস্তিষ্ক থেকে হৃদপিন্ডে রক্ত বহন করে) এবং ঘাড়ের সামনের অংশে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে গবাদি পশু বা হাঁস-মুরগিকে হত্যা করার বিষয়টিও জড়িত।
হালাল ও ঝটকা
জবাই করার সময় পশুদের জীবিত এবং সুস্থ থাকতে হবে এবং মৃতদেহ থেকে সমস্ত রক্ত বের করে দিতে হবে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, শাহাদা নামে প্রার্থনাও করা হয়। এটি হিন্দু ও শিখদের পছন্দসই 'ঝাটকা' পদ্ধতির বিপরীত। 'ঝটকা' পদ্ধতিতে পশুর ঘাড়ের পিছনে একটি শক্তিশালী অথবা একবারে আঘাত করেই তার শিরশ্ছেদ করা হয়। ঝাটকা পদ্ধতি ইসলাম অনুমোদিত নয়। মুসলমান মালিকানাধীন বেশিরভাগ মাংসের দোকান তাদের পণ্যগুলোকে 'হালাল' বলে দাবি করে। আর, হিন্দু বা শিখদের মালিকানাধীন দোকানগুলো 'ঝটকা' পদ্ধতি অনুসরণ করে, এমন প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করে।
আরও পড়ুন- প্যালেস্তাইন নিয়ে লাদেনের চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, রুখতে কড়া ব্যবস্থা, কিন্তু কেন?
হালাল সার্টিফিকেট কী, কে ইস্যু করে?
হালাল শংসাপত্রগুলি একজন ভোক্তাকে জানিয়ে দেয় যে, কোনও পণ্য হালাল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করছে কি না। হালাল পণ্যের সার্টিফিকেট দেওয়ার মত ভারতে কোনও সরকারি নিয়ন্ত্রক নেই। বরং, বিভিন্ন হালাল সার্টিফাইং এজেন্সি আছে যারা কোম্পানি, পণ্য বা খাদ্য প্রতিষ্ঠানকে হালাল সার্টিফিকেট দেয়। তাদের বৈধতা মুসলিম ভোক্তাদের, ইসলামি দেশগুলোর দ্বারা স্বীকৃত। যেমন, সার্টিফিকেশন কোম্পানি হালাল ইন্ডিয়া তার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করে যে ল্যাব টেস্টিং এবং একাধিক পরীক্ষার পরে কীভাবে শংসাপত্র দেওয়া হয়। হালাল ইন্ডিয়ার সার্টিফিকেশন কাতারের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তি মন্ত্রক এবং মালয়েশিয়ার ইসলামিক উন্নয়ন বিভাগ দ্বারা স্বীকৃত। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিগুলো ইসলামিক দেশগুলিতে পণ্য রফতানির জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।