Advertisment

'ইজরায়েলকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে রুখে দেব', গাজায় এবার ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি হামাসের

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আজ (২৮ অক্টোবর) ২২তম দিনে পৌঁছেছে। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে গাজার ইন্টারনেট পরিষেবা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Hamas attack, Israel Hamas War News, Israel-Palestine War, Israel-Gaza War, Israel Gaza Conflict, Israel Palestine Conflict, Israel War News, Hamas War News, Israel Gaza War Updates, Indian Express"

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আজ (২৮ অক্টোবর) ২২তম দিনে পৌঁছেছে।

হাজার হাজার ইজরায়েলি সেনা গাজায় প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যেই স্থল হামলা জোরদার করেছে ইজরায়েল। রাষ্ট্রসংঘের ভোটাভুটির মধ্যেই গতরাতে গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালায় ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। গাজার ইন্টারনেট পরিষেবাকে বিচ্ছিন্ন করে গোটা গাজা উপত্যকাকে (বাসিন্দার সংখ্যা ২৩ লক্ষ) বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আইডিএফ দাবি করেছে যে তারা হামাসের অনেক ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। এর আগে, ইসজরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছিলেন যে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী শীঘ্রই গাজায় তাদের স্থল অভিযান জোরদার করবে। ইজরায়েলি সেনারা গত রাতে প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ করে গাজা উপত্যকায়। উপরন্তু, ইজরায়েলি সেনাবাহিনী স্থল থেকে হামাসের ঘাঁটি এবং জঙ্গিদের নিশানা করছে। ইজরায়েলি নৌবাহিনীও হামাসের ওপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। এদিকে ইজরায়েলের হামলায় পালটা হামাস পূর্ণ শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা জানিয়েছে।

Advertisment

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী ছিটমহলে বিমান ও স্থল হামলা আরও শক্তিশালী করার পরে  হামাস শনিবার বলেছে যে গাজায় তাদের জঙ্গিরা ইজরায়েলের আক্রমণকে 'পূর্ণ শক্তি' দিয়ে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। প্যালেস্তাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী গাজায় ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান আক্রমণের পরে ইজরায়েলি সীমান্তের কাছে যোদ্ধা মোতায়েন এবং ইজরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হামাসের সংঘর্ষের কথা জানিয়েছে। শনিবার সকালে, ইজরায়েল নিশ্চিত করেছে যে আগের রাতে মোতায়েন করা তার সৈন্যরা স্থল অভিযানে সামিল হয়েছে।

গাজায় ইজরায়েলের বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ইজরায়েলের হামলায় হামাস বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। বিমান হামলায় হামাসের বিমান কমান্ডার আবু রাকবা নিহত হয়েছেন। আবু রাকবা ইসরায়েলে ৭ অক্টোবর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলেই দাবি করেছে আইডিএফ।

ইজরায়েলি সেনাবাহিনী আজ সকালে পশ্চিম তীরে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। সেনাবাহিনী এখনও পর্যন্ত ১০ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে। সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করেছে।

ইরাকের ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ঘোষণা করেছে যে তারা জর্ডান ও ইরাক সীমান্তের কাছে দক্ষিণ সিরিয়ার একটি মার্কিন অপারেটিং ঘাঁটিতে গতকাল রাতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স আমেরিকান ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে প্যালেস্তাইন একটি বড় দাবি করেছে। প্যালেস্তাইন জানিয়েছে, ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক গাজায় প্রবেশ করেছে। গভীর রাত থেকে চলছে তুমুল বোমাবাজি। তবে এ বিষয়ে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোন বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে গতকাল রাতে হামাস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, আপনি কেন খুনিদের রক্ষা করছেন? আপনি কেন সন্ত্রাসীদের রক্ষা করছেন যারা ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের শিরচ্ছেদ করে এবং নবজাতকদের অপহরণ করে? এটি আপনার প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত যে এই প্রস্তাবটি যখন উপস্থাপন করা হয়েছিল তখন এর আসল উদ্দেশ্য কী ছিল?

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন যে আমি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি, সমস্ত বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের জন্য আমার আবেদন পুনর্ব্যক্ত করছি। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটাই সত্যের মুহূর্ত। ইতিহাস আমাদের সবার বিচার করবে।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘে যুদ্ধ বন্ধের একটি প্রস্তাব পাস হয়। এর পক্ষে ১২০টি ভোট পড়েছে। একই সময়ে আমেরিকা ও ইজরাইলসহ ১৪টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ভারতসহ ৪৫টি দেশ ভোট দেয়নি। রাষ্ট্রসংঘে ভোটাভুটির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ইজরাইল। ইজরায়েল বলেছে, এই দিনটি কলঙ্কের মতো। পক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলোকে ইসরায়েল প্রশ্ন করেছে, আপনারা কীভাবে সন্ত্রাসীদের সমর্থন করতে পারেন?

বোমা হামলার মধ্যেই গাজায় স্থল অভিযান জোরদার করেছে ইজরাইল। ইজরায়েলি ট্যাংক ও সেনাবাহিনী গাজায় প্রবেশ করেছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, আমরা আমাদের অভিযান আরও জোরদার করব। যুদ্ধের মধ্যে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল হামাস গাজার আল-শিফা হাসপাতালে তাদের সদর দপ্তর তৈরি করেছে। ইজরাইল একটি স্যাটেলাইট ছবিও প্রকাশ করেছে।

ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকায় ক্রমাগত বিমান হামলা  চালাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। গাজায় বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। গাজায় ইন্টারনেট ও ফোন সেবাও ব্যাহত রয়েছে।

গাজা উপত্যকায় অনুপ্রবেশ শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই সময়ের মধ্যে তারা অনেক হামাস কমান্ডারকেও হত্যা করেছে। হামাসের হামলায় এ পর্যন্ত ১৪০৫ জন ইজরায়েলি মারা গেছে এবং ৫৪৩১ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইজরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত মোট ৭,৩২৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে, যার মধ্যে ৩,০৩৮ জন শিশু, ১৭২৬ জন মহিলা এবং ৩৯৭ জন বৃদ্ধ রয়েছেন। গাজা উপত্যকায় ১৮,৯৬৭ জন আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য গাজা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাবনা থেকে দূরত্ব বজায় রাখল ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের সংঘর্ষ নিয়ে ভোটাভুটি থেকে দুরত্ব বজায় রাখল থাকল ভারত। তবে ভারতের পক্ষে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে গাজায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছে ভারত।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আজ (২৮ অক্টোবর) ২২তম দিনে পৌঁছেছে। উভয় পক্ষের এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত আট হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু ইজরাইল এখনও গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ করছে। এসবের মধ্যেই শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। জর্ডানের উপস্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থাকে ভারত।

জর্ডান “নাগরিক সুরক্ষা এবং আইনি ও মানবিক দায়িত্ব পালন”শীর্ষক একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করে। এই প্রস্তাব সমর্থন করে  বাংলাদেশ, মলদ্বীপ, পাকিস্তান, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সহ ৪০টিরও বেশি দেশে। তবে এই প্রস্তাবে হামাসের উল্লেখ ছিল না। ভোটাভুটি শুরু হলে রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১২০টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় এবং ১৪টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়। ভোটদান থেকে বিরত থাকে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান, ইউক্রেন ও  ব্রিটেন সহ ৪৫টি দেশ।

প্রস্তাবনায় গাজায় ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আবেদন জানানো হয়। ১৯৩ সদস্যের রাষ্ট্রপুঞ্জের ৪৫ সদস্যদেশের অনুপস্থিতিতে প্রস্তাবটি ১২০-১৪ ভোটে গৃহীত হয়। যে দেশগুলো ভোটদানে বিরত থাকে তাদের মধ্যে ভারতও ছিল। ভোটাভুটির পর ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈধতা এবং প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।  ইজরায়েল আত্মরক্ষা্র ধারা অব্যাহত রাখবে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। হামাসের নৃশংসতাকে বিশ্বকে মুক্ত করতে ইজরায়েল তার লক্ষ্যে অটূট”।

রাষ্ট্রসংঘের দশম জরুরি বিশেষ অধিবেশনের সভায় গৃহীত প্রস্তাবের বিষয়ে, ভারতের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত যোজনা প্যাটেল বলেছেন যে ‘গাজায় চলমান সংঘাতে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যুদ্ধে জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হচ্ছে। এই সংকটের সমাধান করা দরকার। উত্তেজনা প্রশমনে এবং গাজার জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই। ভারতও এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করেছে।ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জোর দিয়েছিলেন যে ভারত সবসময় আলোচনার মাধ্যমে ইজরাইল-প্যালেস্তাইনি সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করেছে। যদিও ইজরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দা করেছে ভারত।

ভারত ‘হামাসের সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা জানিয়ে কানাডার নেতৃত্বাধীন সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এই খসড়া প্রস্তাবটি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হতে পারেনি। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ গাজার অভ্যন্তরে আটকে পড়া নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের জীবনদায়ী ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবার ক্রমাগত, পর্যাপ্ত এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটগ্রহণ এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ইজরাইল গাজায় তাদের স্থল অভিযান জোরদার করেছে। 

Israel-Palestine clash
Advertisment