হাতরাস গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মামলায় প্রধান অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। একই মামলায় অন্য তিন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৯ বছর বয়সী দলিত মহিলাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বর্বরতায় কেঁপে উঠেছিল সারা দেশ। আজ উত্তর প্রদেশের একটি আদালত এই মামলায় একজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে পাশাপাশি সমস্ত অভিযোগ থেকে অন্য তিনজনকে বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করে।
অভিযুক্ত “সন্দীপ ঠাকুরকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ নং ধারা এবং এসসি/এসটি আইনের বিশেষ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে”। এই মামলায় অভিযুক্ত অন্য তিন আসামিকে মুক্তি দেয় বিশেষ আদালত। এর মধ্যে রয়েছে সন্দীপের আত্মীয় রবি, ও বন্ধু লভ কুশ এবং রামু।আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের পক্ষে হাজির ছিলেন আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা। তিনি আদালতের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার চেষ্টা করব।"
আদালতের রায়ের পর সন্দীপের কাকা রাজেন্দ্র সিং বলেন, “আমি এই রায়কে স্বাগত জানাই কিন্তু কেন একমাত্র সন্দীপকেই দোষী সাব্যস্ত করা হল? এই পুরো বিচারটি রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া পার্সনদের ব্যক্তিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।" লাভ কুশের মা মুন্নি বলেন, “আমি রায়কে স্বাগত জানাই। বিচার বিভাগের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ছিল। আমি শুধু চাই আমার ছেলে ফিরে আসুক। আমি এখন তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।”
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০-এ, ১৯-বছর-বয়সী এক তরুণীকে চার জন মিলে গণধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে। প্রথমে ওই তরুণীকে আলীগড়ের একটি হাসপাতালে এবং তারপর দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় । প্রায় ১৫ দিন পরে, দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃতদেহটি সন্ধ্যায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তার গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পুলিশ এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জোর করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর এই ঘটনায় উত্তাল হয় রাজ্য-রাজনীতি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন মিললেও ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলেই উল্লেখ। যদিও সেই রিপোর্ট নিয়েও বিতর্ক দানা বাঁধে। চাপের মুখে পড়ে সিট গঠন করে যোগী সরকার। পরে সিবিআই গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করে।
গণধর্ষণে অভিযুক্ত চার যুবক
এই মামলায় গ্রামেরই চার যুবকের নাম জড়ায়। সন্দীপ ঠাকুর, লাভকুশ, রামু ও রবিকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। সিবিআই এই মামলায় চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩৭৬ডি, ৩০২, এস সি/এসটি আইন এবং অন্যান্য ধারায় চার্জশিট দাখিল করে।
পাঁচ পুলিশকর্মীকে সাসপেণ্ড করা হয়
এ ঘটনায় এসপি সহ পাঁচ পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়। মামলার তদন্তের পর সিবিআই ২৯ ডিসেম্বর ২০২০-এ গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ দাখিল করে। এই চার্জশিটে নির্যাতিতাকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এসসি-এসটি অ্যাক্ট আদালতে দুই হাজার পাতার চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে সিবিআই। মৃতার পরিবারকে প্রশাসনের তরফে ১০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
এদিন মামলার শুনানির সময় চার আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। চার্জশিটে চূড়ান্ত যুক্তিতর্কের সময় আদালত স্বীকার করে যে, তিন আসামি রামু, লাভকুশ ও রবির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ পেশ করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। তার পরিপ্রেক্ষিতেই তিন অভিযুক্তকে মুক্তি দেয় আদালত।