পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তরুণীর দেহ সৎকার করা হয়েছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে জানিয়েছেন হাথরাসে গণধর্ষিতা-মৃতার পরিবার। নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে আইনজীবী সীমা কুওয়াহা সোমবার আদালতে জানান, সিবিআইয়ের রিপোর্ট গোপন রাখা হোক এবং এই মামলা উত্তরপ্রদেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হোক। মামলা যতদিন না শেষ হয় ততদিন নির্যাতিতার পরিবারকে প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়ারও দাবি করেছেন তিনি।
আদালতে নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের হয়ে আইনজীবী জয়দীপ নারায়ণ মাথুর জানান, 'আমাদের তরফে অনুমতি নেওয়া হয়নি। বরং হাথরাস প্রশাসন জোর খাটিয়ে পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে মৃতার দেহ সৎকার করেছে।' বিবৃতিতে মাথুর বলেন, ' হাথরাসের জেলাশাসক প্রবীণ কুমার লস্কর জানিয়েছিলেন এই ঘটনাকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা সমস্যা হতে পারে বলে খবর মিলেছিল। সেজন্যই রাতেই সৎকার করার সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য লখনউ থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি বলে লস্কর বলেছিলেন। স্থানীয়স্তরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে দাবি করেছিলেন জেলাশাসক।'
এদিকে, হাথরাসের মামলা উত্তরপ্রদেশ থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছে নির্যাতিতা-মৃতার পরিবারের তরফে। এ বিষয়ে আইনজীবী সীমা কুশওয়াহা বলেছেন, 'সিবিআইয়ের রিপোর্ট গোপন রাখা হোক এবং এই মামলা উত্তরপ্রদেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হোক। পরিবার চায় এই মামলা দিল্লি বা মহারাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হোক। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতিতার পরিবারকে প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়ারও হোক।'
নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন ছাড়াও এদিন শুনানিতে উপস্থিতি ছিল রাজ্যে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, এডিজি, ডিজি ও হাথরসের ডিএম। প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর মামলার তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি এফআইআরও করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ ১৪ সেপ্টেম্বর মাঠে কাজ করার সময়ে ধর্ষণ ও মারধর করা হয় ওই দলিত তরুণীকে। ঘটনার ১৫ দিন পর দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন ২৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তার। এপর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তরুণী পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উচ্চবর্ণের চার ব্যক্তির নামও বলেছিলেন। সেই ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। তবে ফরেন্সিক রিপোর্টে গণধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি। পুলিশও জানিয়েছে হাথরাসে গণধর্ষমের কোনও ঘটননা ঘটেনি। তরুণীর মৃত্যুর পরই উত্তাল হয় গোটা দেশ।রাতের অন্ধকারে দেহ সৎকার করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সমালোচনা বিদ্ধ হয় যোগী প্রশাসন। প্রশাসনের কার্যকলাপ দেখে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সোমবার কোর্টে প্রশাসনের আধিকারিকদের শরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
হাথরাসের গণঘর্ষিতার পরিবারের দাবি গ্রামের উচ্চবর্ণের মানুষজন তাদের ক্রমাগত হুমকি দিয়ে চলেছে। এনিয়ে পঞ্চায়েতও বসানো হয়। উচ্চবর্ণের মানুষজনের দাবি, তরুণী অভিযুক্তের পূর্ব পরিচিতি। তার সঙ্গে সম্পর্ক মানতে না পারায় ওই দলিত তরুণীকে পিটিয়ে মেরেছে তার পরিবারের লোকজন।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২রা নভেম্বর।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন