এনআরসি প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা হিন্দুদের সুরক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে অথচ আজ আমরা দেখলাম অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বেশি সংখ্যায় এতে স্থান পেয়েছে। এনআরসির সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা খুব সাবধানে আমাদের ঢুকিয়েছেন তাই এই এনআরসিকে আমি ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করি, এমনটাই বললেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসাম বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ।
আরও পড়ুন- ‘কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়াটা উদ্দেশ্য নয়’ বললেন নাগরিক পঞ্জীর নেপথ্য নায়ক
তিনি বলেন, দেশভাগের পর সর্বহারা হিন্দুরা ভারতবর্ষে দলে দলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আমার পরিবারের লোকেরাও সবকিছু হারিয়ে নিজের ধর্ম রক্ষার্থে ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এটা কোন অন্যায় নয়, কারণ দেশভাগ আমাদের জিজ্ঞেস করে করা হয়নি। তারপর বিভিন্ন সময়ে সেই দেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হওয়ার ফলে আস্তে আস্তে ভারতবর্ষে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। তবে তার সঙ্গে আসতে শুরু করে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরাও। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার এনআরসি প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিয়ে যায়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অধীনে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতীক হাজেরাকে। প্রক্রিয়াটি যত শেষের দিকে এগিয়ে আসছিল আমরা ধীরে ধীরে বুঝতে পারি আসল উদ্দেশ্য থেকে এটি অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছে। এক ভয়ানক চক্রান্তের মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে নির্যাতিত হিন্দুদের। আমরা প্রথমদিকে প্রতিবাদ করেছি এবং বারবার জানতে চেয়েছি প্রক্রিয়াটি আদৌ কতটুকু স্বচ্ছভাবে হচ্ছে। আজ তালিকা প্রকাশের পর আমাদের ধারণা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে আমরা পরিস্কার বুঝতে পেরেছি হিন্দুরা আবারও বঞ্চিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন- বিজেপি খুশি নয়, আসাম এনআরসি থেকে কেন এত কম মানুষ বাদ পড়লেন, প্রশ্ন বিশ্বশর্মার
তবে এর ভালো দিক হচ্ছে বর্তমানে রাজ্যে এবং কেন্দ্রে আমাদের সরকার রয়েছে। এতদিন মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে কাজ চলছিল, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এনআরসি রাজ্য সরকারের হাতে চলে আসবে। এখন রাজ্য সরকার চাইলে নিজের মতো করে ভুল ত্রুটি গুলো শুধরে নিতে পারবে এবং এতে সহায়তা করবে কেন্দ্র সরকার। আমরা এত বছর ধরে যে শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছি, এই ত্রুটিপূর্ণ এনআরসি থাকলে এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব। আমি তাদের কাছে আবেদন রাখব যে ত্রুটি প্রতীক হাজেলা করেছেন। সেটুকু শুধরে নিয়ে প্রথমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের এনআরসির তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে প্রত্যেক হিন্দু নাগরিককে এতে যুক্ত করতে হবে। এটা ঠিক যে ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব বিল পাস হবে এবং এরপর দেশে আর কোনও হিন্দু নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবেন না। তবে এনআরসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় যদি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা স্থান পেয়ে যায়, তাহলে সেটা আমাদের ব্যর্থতা।