খ্যাতির সঙ্গে সর্বদা তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছিল বিতর্ক। প্রয়াত হলেন মার্কিন প্রাক্তন বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জার। সদ্য শতায়ু পেরোন তিনি। বহু বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে অশালীন শব্দ ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ৩০ নভেম্বর কানেকটিকাটে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জার বুধবার (৩০ নভেম্বর) কানেকটিকাটের নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০। হেনরি কিসিঞ্জার ছিলেন এক শীর্ষ কূটনীতিক। তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়ক একাধিক বই লিখেছেন। হেনরি রিচার্ড নিক্সনের সরকারের সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন। বলা হয়, কূটনীতিতে তাঁর মত দক্ষ আর কেউ ছিলেন না। ভিয়েতনামের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতেও হেনরির হাত ছিল। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে, কিসিঞ্জার ইরাকে মার্কিন হামলায় জর্জ বুশ সরকারকে সমর্থন করেছিলেন।
হেনরি কিসিঞ্জারও বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। একদিকে তিনি একজন উজ্জ্বল রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় সময় তিনি বাংলাদেশি গণহত্যায় পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলেন। তার জন্য বলা হয় ছোট দেশের নাগরিকদের রক্ত ঝরিয়ে তিনি একজন 'দক্ষ' কূটনীতিক হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান দুই ভাগে বিভক্ত হয়। যার পূর্ব অংশ বাংলাদেশ হিসাবে পরিচিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এক মাস আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিক্সন ও কিসিঞ্জারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। বৈঠকের পর নিক্সন এবং কিসিঞ্জারের মধ্যে কথোপকথনের সময়, উভয়ঈ ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। কিসিঞ্জার তাকে "যুদ্ধ শুরু করার" জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। কিসিঞ্জার ভারতীয়দের "সবচেয়ে আক্রমনাত্মক" এবং 'দালাল' বলে অভিহিত করেছিলেন। দুজনের মধ্যে এই কথোপকথনটি টেপে রেকর্ড করা হয়। যা ২০২০ সালে সর্ব সমক্ষে আনা হয়। ভারতীয়দের প্রতি নিক্সন এবং কিসিঞ্জারের আপত্তিকর মন্তব্য এই টেপে রেকর্ড করা হয়েছে।
৩০ নভেম্বর কানেকটিকাটের নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হেনরি কিসিঞ্জার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং জেরাল্ড ফোর্ডের মেয়াদে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২৭ মে, ২০২৩-এ তার ১০০ তম জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান এবং আমেরিকান বাহিনী প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে তিনি বড় ভূমিকা পালন করেন তিনি। তবে তার নামে নানা বিতর্ক রয়েছে, বড় বড় গণহত্যার সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সঙ্গেও তার নাম জড়িয়ে আছে।