High Speed Bullet trains from Mumbai to Ahmedabad start in India, 2022: মুম্বই থেকে আমেদাবাদ ৫০৮ কিমি পথ ঘণ্টায় ৩০০ কিমি বেগে ছুটে যাবে বুলেট ট্রেন। সিংহাসনে বসার দিন কয়েকের মধ্যেই এই পরিকল্পনা সেরে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে। গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে জোরকদমে কাজ। বুলেট ট্রেনের ট্র্যাকে চাপা পড়েেছ বহু কৃষকের জমি। ভূমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে একজোট হয়েছিলেন গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রে স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলি দ্বারা সমর্থিত কৃষকরা। এদিকে ন্যাশনাল হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেড সূত্রে খবর, ১.০৮ লাখ কোটি টাকার প্রকল্পের জন্য ৮০ শতাংশ ঋণ নেওয়া হয়েছে জাপান থেকে।
কতটা জমির ওপর তৈরি হবে এই প্রকল্প ?
১৪০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্যে। মহারাষ্ট্রে ৩৫৩ হেক্টর, বাকি গুজরাটে। এই গোটা জমিটা বিভক্ত হবে ৭,০০০টি প্লটে, যার মধ্যে পড়বে গুজরাটের ১৯৫ টি গ্রাম এবং মহারাষ্ট্রের ১০৪ টি গ্রাম। মহারাষ্ট্রের তিনটি জেলা এবং গুজরাটে আটটি ছাড়াও দাদরা ও নগর হাভেলির একটি ছোট এলাকা রয়েছে প্রকল্পটির অন্তর্ভুক্ত।
এখন অবধি কতটা কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে ?
সবেমাত্র জমির মাপজোক শেষ হয়েছে। এলাকা ভিত্তিক যাতায়াত বেড়েছে বিশেষজ্ঞদের। জমি মালিকদের জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়ে গেছে। তবে ট্র্যাক প্রশস্ত হবে ১৭.৫ মিটার, সুতরাং পুরো জমি না ছাড়লেও হবে কৃষকদের। কিন্তু এইধরনের কোনো উল্লেখ নেই ওই নোটিশে। ন্যাশনাল হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিছু জমি বাদ দিতে হবে কৃষকদের, পুরো জমি নয়। তবে সে বিষয়ে প্রভূত সন্দেহ রয়েছে স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং কৃষকদের মধ্যে।
প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের ৫০ টি গ্রাম ও গুজরাটের ৩০ টি গ্রামের মধ্য দিয়ে পাতা হবে লাইন। যা অতিক্রম করবে প্রায় ১০২ কিমি।
High Speed Bullet trains from Mumbai to Ahmedabad start in India, 2022: মুম্বই থেকে আমেদাবাদ, ৫০৮ কিমি, ঝড়ের গতিতে ঘণ্টায় ৩০০ কিমি বেগে ছুটে যাবে বুলেট ট্রেন
জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণ কত দেওয়া হয়েছে?
দুটি রাজ্যের ক্ষতিপূরণের আইন ভিন্ন।
মহারাষ্ট্র: চারবার বদলানো হয়েছে ক্ষতিপূরণের হিসাব। সবশেষে ২৫ শতাংশ বোনাস সহ ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে জমি মালিকদের। এতে যদি কেউ ঘরছাড়া হন, তাহলে তিনি অন্য কোনও জায়গায় ৫০০ বর্গফুটের ওপর নির্মিত একটি নতুন বাড়ি নিতে পারেন অথবা একটি নতুন ঘর নির্মাণ করতে পারেন। যার খরচ দেবে সরকার। এছাড়াও প্রতি মাসে ৩,৬০০ টাকা করে দেওয়া হবে প্রত্যেক পরিবারকে। যাঁরা নিজেদের দোকান হারিয়েছেন, তাঁদের এককালিন ২৫,০০০ টাকা দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
গুজরাট: এই রাজ্যের অধীনে ক্ষতিপূরণ প্রযোজ্য মূল্যের ৪.৭৫ গুণ বেশি। রাজ্য সরকার হয় এই মূল্য দেবেন, নাহয় গড়পড়তা মূল্য দেবেন ১.৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ বা রেডিয়াসের মধ্যে, দুটি অঙ্কের মধ্যে কোনটি বেশি তার ওপর নির্ভর করে। কোম্পানি ২৫ শতাংশ বোনাসেরও ঘোষণা করেছে, সঙ্গে মহারাষ্ট্রে যে ধরনের জীবিকার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে তাই।
জমি মালিক ছাড়া কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি বা এনসিপি, মহারাষ্ট্র নবনির্মান সেনা (এমএনএস), এবং শিব সেনার নেতারা নেমেছেন জমি অধিগ্রহনের প্রতিবাদে। এছাড়াও রয়েছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য আমি ইয়াগনিক, এবং এনসিপি মুখপাত্র নওয়াব মালিক। ইতিমধ্যে প্রতিরোধের পাঁচটি পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছে গুজরাট হাইকোর্টে। অন্যদিকে বম্বে হাইকোর্টে ভিখরোলির ৩.৫ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে গডরেজ গ্রুপ মামলা করেছে। যার পরবর্তী শুনানি ৩১ জুলাই।
শুধুই কি ক্ষতিপূরণের প্রতিবাদ?
শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণই নয়, প্রশ্ন উঠেছে প্রকল্পের নানা খুঁটিনাটি নিয়ে। একটি বুলেট ট্রেন পূর্ণ গতিতে ছুটলে কম্পনের সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে পারিপার্শ্বিকের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে এখন অবধি খোলসা করে কিছু জানানো হয়নি সরকারের তরফ থেকে। সুরাটের পারভরঞ্জন সুরক্ষা সমিতি জানিয়েছে, কৃষকরা তাঁদের জমির এক অংশ থেকে অন্য অংশে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন, কারণ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করবে বুলেট ট্রেন। পিলারের জন্য ছেড়ে দিতে হবে জমির কিছু অংশ। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর সেই জমি কী চাষ করার উপযোগী থাকবে? এর সদুত্তর এখনো মেলে নি।
সমস্যা সমাধানের জন্য কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সরকার ?
গত মে মাসে NHSRCL এম ডি আঁচল খারে বলেন, "প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত জমির জন্য একটি এনটাইটেলমেন্ট কার্ড প্রদান করা হবে, যেখানে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর থাকবে, এবং সেখানেই জমা হবে ক্ষতিপূরণের টাকা।" যাঁদের জমি বিভক্ত হবে, তাঁদের জমির পরিমাণের ভিত্তিতে একটি বিশেষ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। যে জমি সেতুর উভয় পাশেই থাকবে, সেই সব মালিকের জমি তাঁদের অধীনেই থাকবে এবং তাঁরা নিজের ইচ্ছামত তা ব্যবহার করতে পারবেন।
সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং জীবিকা রক্ষার্থে বিভিন্ন দাবির কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে। পালগার ও গুজরাটের কিছু অংশে ডাক্তার ইতিমধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে, জেলা প্রশাসন থেকে নার্সদের মতো সহায়ক কর্মীও সরবরাহ করা হবে।