কর্নাটকের উদুপি প্রাক-ইউনিভার্সিটি কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ম বিরুদ্ধ বলে জানিয়েছে কলেজ প্রশাসন। দ্বাদশ শ্রেণির ৬ জন ছাত্রীকে হিজাব পরার অপরাধে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এবার ওই ৬ ছাত্রীকে অনলাইনে ক্লাস করার কথা বলেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে বিতর্ক আরও ঘোরাল হয়েছে।
ওই ৬ ছাত্রীর মধ্যে একজনের বাবা বলেছিলেন, 'সরকার যদি হিজাব পরাকে অপরাধ মনে করে, এবং আমার মেয়েকে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। আমরা চাই আমার মেয়ে ভালো পড়াশোনা করুক এবং জীবনে প্রতিষ্ঠা পাক। কিন্তু তাঁর অধিকার কেন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে?'
হিজাব পরার অপরাধে ক্লাস করতে না পারা এক ছাত্রীর কথায়, 'আমাদের ধর্ম অনুযায়ী নিয়ম মানতে চেয়েছি। বদলে আমাদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো আচরণ করা হচ্ছে। এটা মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। আমাকে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি এবং যদি কাউকে আমাদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়, তাদেরও টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।'
হিজাবকাণ্ড মাথাচাড়া দিতেই পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে। তবে কোভিড প্রাদুর্ভাবের কারণে কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে বিতর্ক শিথিল হয়েছিল। কিন্তু এখন ফের সেটি প্রকট হচ্ছে।
কলেজ উন্নয়ন কমিটির প্রধান বিজেপি বিধায়ক কে রঘুপতি ভাটের নেতৃত্বাধীন কমিটির পরামর্শ, যতদিন না এই বিষয়ে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করছে ততক্ষণ ওই ৬ ছাত্রী হিজাব পরে ক্লাস করুক।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময়, কর্নাটকের শিক্ষামন্ত্রী বি সি নাগেশ বলেছেন, 'আমরা ইউনিফর্ম বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছি। আমরা একটি কলেজের জন্য গোটা প্রক্রিয়া বদলে ফেলতে পারি না। কমিটি রিপোর্ট দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা রাজ্যের সমস্ত স্কুল ও কলেজকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছি।'
শিক্ষা দফতর জানাচ্ছে, সরকারি বা বেসরকারি কলেজের পড়ুয়াদের জন্য ইউনিফর্ম নির্ধারণ করা হয় না। এক্ষেত্রে কলেজগুলি নিজস্ব নিয়ম রয়েছে।
উডুপি কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করেছে যে, 'আগে পর্যন্ত ক্লাসে হিজাবের অনুমতি ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এতে আপত্তি জানিয়ে আসছে এবং আমাদেরকে ক্লাসরুমের ভেতর হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু আমরা ক্লাসে হিজাব পরতে চাই, আবেদন করা হলেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমরাও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল।'
কলেজের অধ্যক্ষ রুদ্রে গৌড়া বলেছেন, 'হিজাবের নিয়মটি 1985 সালে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বলবৎ রয়েছে। নিয়ম অনুসারে, ছাত্রীরা তাদের ডেস্কে না পৌঁছানো পর্যন্ত হিজাব পরতে পারে। ক্লাস শুরু হলে তাদের হিজাব খুলে ফেলতে হয়। কিন্তু সমস্যাটি কেন হঠাৎ ডিসেম্বরের শেষে শুরু হল তা বুঝতে পাচ্ছি না।'
যদিও হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনো নির্দেশ নেই। বেঙ্গালুরুর আইনজীবী মৈত্রেয়ী কৃষ্ণান এ জন্য ২০১৬ সালের কেরল হাইকোর্টের একটি রায়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় প্রাক-মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য একটি ড্রেস কোড সংক্রান্ত মামলায় আদালত জানিয়েছিল যে, হিজাব নিষিদ্ধ করা ধর্মীয় সংবিধানের ২৫(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করার শামিল ও ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করে। ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে চলার অধিকার সবার রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না।
উডুপির, শিক্ষক এবং স্থানীয় নেতারা মনে করেন যে বিষয়টি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিতর্কটি এখন জেলার অন্যান্য স্কুল এবং কলেজগুলিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কিত তাঁরা। মৌলবাদী দলগুলি রাজনৈতিক সুবিধা নিতেই এই কাজ করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া ছাত্রীদের দাবিকে সমর্থন করেছে। কিন্তু হিন্দু জাগরানা বেদিকের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কুক্কেহাল্লির হুঁশিয়ারি, 'হিজাবের অনুমতি দেওয়া হলে হিন্দু ছাত্ররা গেরুয়া শাল পরে ক্লাস করবে।'
মুসলিম কো-অর্ডিনেশন কমিটির সেক্রেটারি আবদুল রেহমান রাজভি কলকাত্তা বলেন, 'আমরা জানি না কীভাবে এই সমস্যাটি তৈরি হয়েছে কিন্তু যদি এর সুরাহা না করা হয়, তাহলে তা অন্যান্য স্কুল ও কলেজে ছড়িয়ে পড়বে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ দূষিত হবে।'
কলেজটিতে ৭৬ জন মুসলিম পড়ুয়া সহ প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বুধবার, বিধায়ক ভাট মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং অধ্যক্ষের সাথে একটি বৈঠক করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন যে হিজাব ছাড়া ক্লাসে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময় ভাট বলেছিলেন: 'এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার নিজস্ব নিয়ম রয়েছে, এবং এই কলেজটি নিজস্ব নিয়ম করেছে। কাগজে কলমে কিছু নেই কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তা অনুসরণ করা হচ্ছে।'
স্থানীয় নেতা ও আধিকারিকদের মতে, বিতর্কের শিকড় পিএফআই-এর রাজনৈতিক শাখা সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়ার (এসডিপিআই) উদুপিতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যেই নিহিত। গত মাসে, এসডিপিআই উদুপি শহরে স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনে তিনটি আসন জিতেছে। থাবা বসিয়েছে কংগ্রে ভোট ব্যাংকে।
আরও পড়ুন- ভাঙল বেড়া, ৭৪ বছর পর দেখা হল দুই ভাইয়ের, ভারতের সিক্কা খানকে ভিসা দিল পাকিস্তান
Read in English