হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় মুখ খুলেছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপ জানিয়েছে, এটি ভারতের বিরুদ্ধে একটি ‘সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্টের ভিত্তিতে ৪১৩ পাতার ‘জবাব’দিয়েছে আদানি গ্রুপ। একই সঙ্গে গৌতম আদানির সংস্থার অভিযোগ, শুধুমাত্র কোনও একটি নির্দিষ্ট সংস্থা নয়, বরং ভারতের উপর ‘পরিকল্পিত হামলা’ চালিয়েছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ।
রবিবার রাতে আদানি গ্রুপের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে যে সব সংস্থার সঙ্গে আদানি গ্রুপের আর্থিক লেনদেন হয়েছে, সেগুলির প্রতিটিই ভারতীয় আইন এবং যথাযথ নিয়ম মেনেই হয়েছে। সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যও ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে আদানি গ্রুপ। আদানি গ্রুপের আরও অভিযোগ ভারতের ওপর ‘পরিকল্পিত হামলা’চালানোর উদ্দেশ্যে এই কাজটা করা হয়েছে, যাতে অসংখ্য বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হিন্ডেনবার্গ অবৈধভাবে বড়সড় আর্থিক লাভ করতে পারে। যে সংস্থা নিজেরাই শর্ট সেলার।'
একই সঙ্গে আদানি গ্রুপ রিপোর্টে উল্লেখিত ৪৪ টি প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছে। আদানি গ্রুপ বলেছে যে প্রতিবেদনটি একটি মিথ্যা বাজার তৈরির উদ্দেশ্য প্রকাশ করা হয়েছে যাতে মার্কিন সংস্থাটি আর্থিক সুবিধা পেতে পারে। এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির উপর একটি অযৌক্তিক আক্রমণ নয়, বরং ভারত, ভারতীয় স্বাধীনতা, অখণ্ডতা এবং উন্নয়ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপর নিয়মতান্ত্রিক আক্রমণ।
একই সঙ্গে আদানি গ্রুপের আরও দাবি, কোন গবেষণা ছাড়াই রিপোর্টটি সামনে আনা হয়েছে। এই বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট আদানি গ্রুপ, শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। একই সঙ্গে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের জন্য হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারিও দিয়েছে আদানি গ্রুপ।
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে স্টক ম্যানিপুলেশন, জালিয়াতির অভিযোগ, কী এই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে স্টক ম্যানিপুলেশন এবং জালিয়াতির অভিযোগ করেছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থা। এতে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছে। রিসার্চ সংস্থাটির অভিযোগ, আদানি গ্রুপ কয়েক দশক ধরেই স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতি প্রকল্পে জড়িত।রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই হিন্ডেনবার্গ সংস্থাটির অভিযোগ যে আদানি গ্রুপের মূল কোম্পানিগুলোর প্রচুর দেনা আছে। যা কার্যত গোটা আদানি গ্রুপকেই অনিশ্চিত আর্থিক অবস্থানের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
আদানি গ্রুপের বক্তব্য
আদানি গ্রুপ অবশ্য এই রিপোর্টকে মোটেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে রাজি হয়নি। উলটে সংস্থার চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার জুগেসিন্দর সিং বলেন, ‘এই প্রতিবেদন ভুল তথ্য দিয়েছে। বাসি খবর দিয়েছে। ভিত্তিহীন খবর দিয়েছে। মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছে।’
কীভাবে হিন্ডেনবার্গ গবেষণা করে?
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তার ওয়েবসাইটে বলেছে যে সংস্থাটি ফরেনসিক এবং আর্থিক গবেষণায় বিশেষজ্ঞ। সংস্থাটির দাবি, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা শিল্পে তাদের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে, ‘ইক্যুইটি, ক্রেডিট এবং ডেরিভেটিভ বিশ্লেষণের ওপর সংস্থাটির নজরদারির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’
কীসের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা?
হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, তারা বিশ্বাস করে যে, ‘অতিপ্রয়োজনীয় উত্স থেকে খুঁজে পাওয়া হার্ড-টু-ফাইন্ড তথ্য উন্মোচনের সবচেয়ে প্রভাবশালী গবেষণার ফলাফল’। সংস্থাটি বিশেষ করে ‘অ্যাকাউন্টিং অনিয়ম’-এর সন্ধান করে। ব্যবস্থাপনা বা প্রধান পরিষেবা প্রদানকারীর ভূমিকা, অপ্রকাশিত লেনদেন, অবৈধ/অনৈতিক ব্যবসা, তার আর্থিক রিপোর্টিং, কোম্পানিগুলির অপ্রকাশিত নিয়ন্ত্রক, পণ্য বা আর্থিক সমস্যার মত বিষয়গুলোর ওপর তারা রিপোর্ট তৈরির সময় নজর রাখে।
হিন্ডেনবার্গ সংস্থার পিছনে কারা আছেন?
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ এলএলসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাথান (নেট) অ্যান্ডারসন (৩৮)। তিনি কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার আগে থাকতেন জেরুজালেমে। সেখানে তিনি ফ্যাক্টসেট নামে একটি আর্থিক সফটওয়্যার কোম্পানির পরামর্শদাতার কাজ নেন। তারপরে ওয়াশিংটন ডিসি এবং নিউ ইয়র্কের ব্রোকার ডিলার ফার্মগুলোর পরামর্শদাতার দায়িত্ব নেন। ২০২১ সালের জুন মাসে ফিনান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল অ্যান্ডারসনের জীবনকাহিনি।