অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার স্বঘোষিত কার্যনির্বাহী সভাপতি কমলেশ তিওয়ারিকে শুক্রবার লখনৌয়ে তাঁর নিজের বাড়ি থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তিওয়ারির।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিওয়ারির গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, এবং ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশের জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা জমি মামলার আবেদনকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন তিওয়ারি।
তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বেশ কিছু মানুষ, যার ফলে শহরের ফতেগঞ্জ এবং আমিনাবাদ এলাকায় বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। এখনও দেহের ময়নাতদন্ত করা হয় নি।
তিওয়ারির সহযোগী স্বতন্ত্রদীপ সিং জানিয়েছেন, সকাল ১১ টা নাগাদ তিওয়ারির সঙ্গে তাঁরই বাড়িতে দেখা করতে আসেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের বাড়ির দোতলায় ডেকে নেন তিওয়ারি। সিং বলেন, "ওদের মধ্যে একজন আমাকে বলে সিগারেট নিয়ে আসতে, কাজেই আমি বাজারে যাই। ফিরে এসে দেখি, ঘরের মধ্যে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে কমলেশ।" সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে খবর দেন সিং।
লখনৌ রেঞ্জের ইন্সপেক্টর জেনারেল এস কে ভগত বলেছেন, হত্যাকারীরা আধঘণ্টা কাটায় তিওয়ারির সঙ্গে, অতএব ধরে নেওয়া যায় তারা তিওয়ারির পূর্বপরিচিত। তাঁর বাড়ি থেকে একটি পিস্তল ও একটি শূন্য কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ভগত জানান যে যদিও তিওয়ারির গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না পেলে কোনও সিদ্ধান্তে আসবে না পুলিশ।
২০১৫ সালে হজরত মহম্মদের বিরুদ্ধে তথাকথিত অসম্মানজনক মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে আসেন তিওয়ারি। তাঁর মন্তব্যের ফলে দেশজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়, এবং ব্যাপক প্রতিবাদ আসে একাধিক মহল থেকে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ 'ক' (ধর্মের ভিত্তিতে একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করা এবং শান্তি বিঘ্নিত করা), এবং ২৯৫ 'ক' (ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও গোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা বা ধর্মকে অপমান করা) ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। এর পরে জাতীয় সুরক্ষা আইনের আওতায় গ্রেফতারও করা হয় তিওয়ারিকে, যদিও ২০১৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ বাতিল করে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনৌ বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, হিন্দু মহাসভা একটি দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল, যা ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে হিন্দুদের অধিকার সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। সীতাপুরের বাসিন্দা তিওয়ারি মধ্য লখনৌ আসন থেকে দলের হয়ে ২০১২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ে হেরে যান।