দিনটা ছিল ১২ নভেম্বর। তখন দীপাবলিতে মেতে গোটা ভারত। উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকা পড়েন ৪১ শ্রমিক। এরপর দীর্ঘ অগ্নিপরীক্ষা। গোটা দেশ আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলেছে। প্রতীক্ষা ছিল, কবে এই অগ্নিপরীক্ষার সমাপ্তি ঘটবে। অবশেষে ৪০০ ঘন্টার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। একে একে বের করে আনা হয় ৪১ জন আটকে থেকে শ্রমিককে। উদ্ধার অভিযানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধর্ম পরিচয় ভুলে উদ্ধার অভিযানে সামিল থেকেছেন হিন্দু-মুসলিম।
যে সংস্থার কর্মচারীরা উত্তরাখণ্ড টানেলের শেষের প্রসারিত অংশে খননকার্য পরিচালনা করেছিলেন যাদের জন্য মঙ্গলবার আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটেছিল সংস্থার প্রধান টিমের বৈচিত্র্যের উপর জোর দিয়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে বলার সময়, দিল্লির রকওয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক ওয়াকিল হাসান বলেছেন, “আমাদের টিমে হিন্দু এবং মুসলমান সকলেই রয়েছেন। উভয় ধর্মের লোকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ৪১ জনের জীবন বাঁচাতে প্রাণপাত করেছেন। তাদের কেউই একা এই কাজটি সম্পন্ন করেনি। এটা একটা টিম ওয়ার্ক। এই বার্তাই আমি সবাইকে দিতে চাই… আমাদের সকলের উচিত জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এক সঙ্গে বাঁচা। সমাজে কোন ভাবেই ঘৃণার বিষ ছড়ানো উচিত নয়। আমরা সবাই দেশের জন্য আমাদের ১০০শতাংশ দিতে চাই… দয়া করে আমার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিন।”
১২ জনের মধ্যে ৬জন দিল্লির এবং ৬জন উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর থেকে এসেছিলেন শ্রমিকদের উদ্ধার অভিযানে। সোমবার এবং মঙ্গলবারের মধ্যে, আটকে পড়া লোকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তারা প্রায় ১২ মিটার সরু পাইপ খনন করে। উদ্ধারকারীরা হলেন, হাসান, মুন্না কুরেশি, নাসিম মালিক, মনু কুমার, সৌরভ, যতীন কুমার, অঙ্কুর, নাসির খান, দেবেন্দ্র, ফিরোজ কুরেশি, রশিদ আনসারি এবং ইরশাদ আনসারি । সকলেরই বয়স ২০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।
উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য হাসান বলেন, “প্রতি মুহূর্তেই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেছি। সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি ১৪০ কোটিরও বেশি মানুষ আমাদের উপর ভরসা করছিলেন। যা আমাদের অনুপ্রেরণাও দিয়েছে। আমাদের এটি করতেই হবে এবং ব্যর্থতা বা অলস বা ক্লান্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই… প্রায় ১২-১৫ মিটার খনন করতে আমাদের প্রায় ২৬-২৭ ঘন্টা লেগেছিল। সাধারণ পরিস্থিতিতে, একই ধরণের খনন কার্যে সাধারণত ১০-১৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু এখানে আমরা শুধু কাজ করছিলাম না, জীবন বাঁচানোর তাগিদ ছিল"। তিনি বলেন, "কাজের জন্য তারা কোনো টাকা বা বেতন নেননি। “আমরা এই কাজের বিনিময়ে কোনো টাকা চাইনি। ৪১ জনের জীবন বাঁচানোর থেকে বড় আর কিছু হতে পারে। এটা আমাদের কাছে ছিল একটি মিশন। সেই মিশনে আমরা সফল"।
আরও পড়ুন Premium: সুড়ঙ্গ জয়ের ৪০০ ঘন্টা! ঐক্যবদ্ধ হার না মানা লড়াই, সাফল্যের এ কাহিনী চমকে দেবে