দেশভাগের স্মৃতি আজও কাঁদায়, সংগ্রহের তালিকায় রয়েছে দেড়হাজার বই, অবাক যন্ত্রণার এই কাহিনী। রাওয়ালপিন্ডি থেকে ৭৬ বছরের সম্পর্ক ত্যাগ করে দিল্লি চলে আসতে বাধ্য হন গুরপ্রীত সিং আনন্দ। তাঁর সংগ্রহের তালিকায় রয়েছে দেশভাগের ওপর দেড় হাজারের বেশি বইয়ের কালেকশন। যাকে তিনি "বেদনার বান্ডিল” বলে উল্লেখ করেছেন। ভারত ভাগের পর পাঞ্জাব দ্বিখণ্ডিত হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয় সেই সময় বাধ্য হয়েই ভারতে আসেন তিনি। তিনি গড়ে তুলেছেন এমন এক লাইব্রেরি যেখানে রয়েছে ১৫০০ টিরও বেশি বই, নথি এবং দেশভাগের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার একাধিক সংগ্রহ। সীমান্তের দু'পাশের মানুষদের ভয়ঙ্কর বর্ণনা ফুটে উঠেছে সেই সকল সংগ্রহে।
আনন্দ বলেছেন, "স্মৃতির এই টুকরোগুলি সংগ্রহ করা এমন একটি কাজ যার মর্যাদা সবাই বুঝতে পারেন না। আমি সেই পরিস্থিতিগুলি বুঝতে পেরে সেগুলিকে সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলাম। তার সসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমার অতীত। আমার পরিবারকে বাড়ি-ঘর, শিকড় ছেড়ে চলে যেতে একপ্রকার যেতে বাধ্য করা হয়। দেশভাগের পর দিল্লি হয়ে ওঠে তার স্থায়ী ঠিকানা। পরিবারের বড়দের কাছ থেকে রাওয়ালপিন্ডি, পেশোয়ার, লাহোরের গল্প শোনার পাঠ শুরু।
২০০৪ সালে স্মৃতি আওড়াতে পাকিস্তানে যান তিনি। তিনি সফর প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি আমাদের পুরনো সম্পত্তির সকল নথি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি মুরিতে গিয়ে নথিগুলি দেখিয়ে জানতে পারি সম্পত্তিগুলি এখনও আমার দাদা রাম সিং আনন্দের নামেই ছিল। আমার দাদু-ঠাকুমা বর্তমান মালিকের বাবা-মাকে বাড়িটি দিয়ে এবং ভারতে চলে যান। আমি আরও বেশি করে ইতিহাস ঘাটতে থাকি এবং কখনই বুঝতে পারিনি যে আমি একজন গল্প সংগ্রাহক হয়ে উঠেছি’।
১৯৪৭-এর মধ্যরাতে প্রদত্ত জওহর লাল নেহরুর বক্তৃতা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘পাঞ্জাব, সিন্ধু এবং বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য নিমেষেই বদলে যায় সেই দেশভাগের ফলে”। আনন্দ আরও বলেন, বিরল দেশভাগের সাহিত্য সংগ্রহের পিছনে একটি অবিচল শক্তি এবং অনুপ্রেরণা ছিল তার বাবার ১৯৪৭ সালের হাতে লেখা একটি ডায়েরি। তিনি বলেন, “আমার বাবা গুরচরণ সিং আনন্দ রাওয়ালপিন্ডি কমিউনিস্ট পার্টির ব্রিটিশ-বিরোধী এবং বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী পরিকল্পনায় সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট, ১৯৪৭ পর্যন্ত জেলে ছিলেন।
দেশভাগের পর দিল্লি আসার সময় বাবার বেশ কিছু বইয়ের সংগ্রহ আজও স্থান পেয়েছে তার লাইব্রেরিতে। এখন যে বইগুলো তার লাইব্রেরির অংশ হয়ে উঠেছে সেগুলো সংগ্রহ করা সহজ ছিল না। বেশিরভাগ বই বিদেশ থেকে অর্ডার দিয়ে আনা। আমি দিল্লিতে জন্মেছি ঠিকই কিন্তু মন প্রাণ এখনও আমার আমার পুর্বপুরুষদের দেশেই রয়ে গিয়েছে। সেই থেকেই ইতিহাসের এই টুকরোগুলি সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা শুরু আমার, বলেছেন আনন্দ।