অনার কিলিং - এই পরিচিত শব্দবন্ধ ব্যবহারে বদল আনার পক্ষে সওয়াল করলেন দলিত ও অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা । দলিত বা নিম্ন বর্ণের মানুষরা উচ্চবর্ণের কাউকে বিয়ে করার জন্য যখন নিহত হন, তখন অনার কিলিং নামক পরিভাষা ব্যবহারের কোনও অর্থ নেই বলেই মনে করেন লেখক অধ্যাপক কাঞ্চা ইলাইয়া বা তেলেঙ্গানার গণসঙ্গীত গায়ক গদর। কাঞ্চা ইলাইয়া বলেছেন, ‘‘কাউকে হত্যা করার মধ্যে সম্মানটা কোথায়? জাতিভিত্তিক হত্যাকে অনার কিলিং নাম দেওয়ার মানে কী? দলিতরা তাঁদের নিম্ন জাতের জন্য নিহত হচ্ছেন, ফলে এগুলো জাতি ভিত্তিক হত্যা, এবং এগুলোকে সে নামেই ডাকা উচিত।’’
কাঞ্চা ইলাইয়া এদিন বলেছেন, জাতি-ভিত্তিক বৈষম্য এবং হত্যা এবারের তেলেঙ্গানা নির্বাচনে একটি ইস্যু হওয়া উচিত। তেলেঙ্গানার নালগোণ্ডায় উচ্চবর্ণের মহিলাকে বিয়ে করার জন্য পি প্রণয় কুমার নামের যে দলিতকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন কাঞ্চা ইলাইয়া। সারা তেলেঙ্গানার কয়েকশ সমাজকর্মা, তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতি ও অনগ্রসর জাতি এবং মানবাধিকার কর্মীরা নিহত পি প্রণয়কুমারের বাড়িতে যান তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী অমৃতা বর্ষিণী ও পরিবারের মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
এদিনের কর্মসূচিতে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে ছিলেন। দলিত সংগঠনগুলির তরফ থেকে শ্লোগান তোলা হয় উঁচু গলায়, ডাক দেওয়া হয় জাতিভিত্তিক সংস্কারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের। বহুজন বামফ্রন্টের এস বেঙ্কটেশ নায়েক বলেন, উচ্চবর্ণীয়দের মধ্যে জাতি চেতনা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। একজন উচ্চবর্ণীয় মহিলাকে বিয়ে করার জন্য নিম্নবর্ণের কাউকে খুন করা হলে, উচ্চবর্ণীয়রা সে খুনকে শুধু সমর্থনই করছে না, তার পক্ষে যুক্তিও সাজাচ্ছে। মানুষ মানুষকে সম্মানের জন্য খুন করতে পারে না। এ ধরনের খুন করা হয় কারণ ওরা নিম্নবর্ণীয়দের ঘৃণা করে।’’ এদিন পি প্রণয় কুমারের বাড়ির সামনে যথেষ্ট সংখ্যক নিরাপত্তাবাহিনীও মজুত করা হয়েছিল।
স্বামী পি প্রণয় কুমারের পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে নালগোণ্ডা জেলা কালেক্টর গৌরব উপ্পল এবং এসপিএ ভি রঙ্গানাথ রেড্ডির সঙ্গে দেখা করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট স্থাপনের অনুরোধ জানান অমৃতা বর্ষিণী। প্রণয়ের বাবা পি বালাস্বামী বলেছেন, ‘‘আমার ওঁদের বলেছি যে মারুতি রাও এবং তাঁর ভাই শ্রাবণ রাও যদি একবার জামিন পেয়ে যায় তাহলে ওরা প্রভাব খাটিয়ে এবং অর্থ ব্যয় করে মামলা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তাই ওদের যত দ্রুত সম্ভব বিচারের আওতায় আনা দরকার। সে কারণেই ফাস্ট ট্র্যাক আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছে।’’ জেলা কালেক্টর অমৃতার হাতে ৮ লাখ টাকার চেক তুলে দেন এবং তাঁকে রাজ্য সরকারি প্রকল্পে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।
গত সপ্তাহে গর্ভবতী স্ত্রী অমৃতা বর্ষিণীকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে খুন হন পি প্রণয় কুমার। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অমৃতার বাবা ও কাকাকে। অমৃতার প্রভাবশালী বাবা জামাইকে খুন করার জন্য কন্ট্র্যাক্ট কিলারদের ১ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলেও জানা গেছে।