সাহারানপুরে ৫৯, কুশীনগরে ১০, এবং হরিদ্বারে ৩০। এই হলো উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সীমান্তের গত চারদিনের বিষমদে মৃত্যুর সরকারি হিসেব। এবং পুলিশের খবর অনুযায়ী, হরিদ্বারই এই বিষমদের উৎস।
বিয়েবাড়ি হোক বা প্রার্থনাসভা, অথবা যে কোনো জন সমাবেশ, উত্তরাখণ্ডের সীমান্ত ঘেঁষা উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার গ্রামে গ্রামে সাদা প্লাস্টিকের পাউচে বিক্রি হতো সস্তা কাঁচা মাল দিয়ে তৈরি দেশী মদ, দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা। স্থানীয়দের কাছে এটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
কিন্তু স্থানীয়দের অভিজ্ঞতাও বলছে, মদ খেয়ে এই হারে মৃত্যু এই প্রথম।
রাজ্য জুড়ে দুদিন ধরে অভিযান চালিয়ে ৭৯,০০০ লিটারেরও বেশি দেশী মদ বাজেয়াপ্ত করেছে আদিত্যনাথ সরকার। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩,০৪৯ জনকে। সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মোট ২,৮১২টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। আগ্রার কাছাকাছি অঞ্চল থেকেই ২,৭০০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিষমদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে ওই দলকে।
আরও পড়ুন, আসামে নিহত বাংলার দুই শ্রমিক
ধরম সিং (৩৬) জানালেন, বিষমদে তাঁর ভাই গুলাবের মৃত্যু হয়েছে। এবং আরও চারজন আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। "আমাদের গ্রামে চার-পাঁচ জন এই মদ বিক্রি করে। সবাই জানে। ওদেরই একজন আমাদের পরিবারের একজনকে বৃহস্পতিবার মদ বিক্রি করে। আমরা সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু আমার সবচেয়ে ছোট ভাইটাকে বাঁচাতে পারলাম না। বাকিদের চিকিৎসা চলছে।"
হাজার তিনেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলেও ওই বিপুল পরিমাণ বিষমদ কোথায় তৈরি হয়, সেই ব্যাপারে এখনও কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। প্রাথমিকভাবে, এবং বিশেষ করে কোলাকালি গ্রামের বাসিন্দাদের বয়ানের ভিত্তিতে, অনুমান করা হচ্ছে দুই রাজ্যের সীমান্তের জঙ্গল এলাকায় ব্যাপক হারে ওই মদ তৈরি হয়।
বিষমদ খেয়ে মৃত রাকেশের স্ত্রী রীনা জানালেন, "আমার স্পষ্ট মনে আছে বছর চল্লিশের এক মহিলা রাস্তার ধারে মদ বিক্রি করছিল, ওর কাছ থেকেই মদ কিনে খেয়ে আমার স্বামী গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান। মহিলাকে আশেপাশের অনেকেই চেনেন। ওই দিনের পর থেকে মহিলার কোনও খোঁজ নেই। ওর যেন শাস্তি হয়।"
জনৈক টিঙ্কু ভার্মার মতো অনেকেই আবার মৃত্যুর হাত থেকে নিস্তার পেলেও মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পেটে ব্যথা, শরীরে অসাড় ভাব, ক্লান্তি, এসব উপশম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। ঠিক কী উপকরণ ব্যবহার করে ওই মদ বানানো হয়েছে, এখনও জানা যায়নি। লখনউতে মৃতদের ভিসেরার (নাড়িভুঁড়ির) নমুনা পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। সাহারানপুর সরকারি হাসপাতালের মুখ্য সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডঃ এসকে ভার্শনে বলেছেন ইথাইল অ্যালকোহলের বদলে মিথাইল অ্যালকোহল অনেক সস্তা হওয়ায় ওটি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
ওদিকে বিষমদের উৎসের খোঁজে সীমান্ত জুড়ে যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড পুলিশ। শোনা যাচ্ছে, রবিবার গ্রেফতার হওয়া দুজন ব্যক্তি মদ বিক্রীর কথা স্বীকার করে পুলিশকে আরও কিছু সূত্রও দিয়েছে।