/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/12/miners1.jpg)
পনেরো দিন ধরে ওঁরা পনেরো জন কয়লাখনির মধ্যে বন্দী। আজ প্রথমবার উদ্ধারকারীরা জানালেন, তাঁরা "দুর্গন্ধ" পাচ্ছেন। পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড় জেলার সাইপুং অঞ্চলে এক পক্ষকাল ধরে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন ন্যাশনাল ডিসাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) ডুবুরিরা। এবার তাঁদের কথায় স্পষ্ট, উদ্ধারের প্রয়োজন বোধহয় ফুরিয়ে এলো।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/12/ndrf.jpg)
"লক্ষণ ভালো নয়," বলছেন উদ্ধারকার্যের নেতৃত্বে থাকা এনডিআরএফ-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট সন্তোষ সিং। আর কিছু বলছেন না তিনি, কিন্তু তাঁর সহকর্মীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন যে দুর্গন্ধের অর্থ সম্ভবত এই যে ওই খনি শ্রমিকরা আর জীবিত নেই, এবং তাঁদের দেহে পচন ধরতে শুরু করেছে। ১৩ ডিসেম্বর এই 'ইঁদুরের গর্ত' খনিতে লিটাইন নদীর জল ঢুকে যাওয়াতে আটকে পড়েন শ্রমিকরা। খনির ভেতর জলের স্তর কমানো যায় নি, এবং সোমবার থেকে জল কমানোর কোনো চেষ্টাও করা হয় নি, কারণ দুটি ২৫ হর্স পাওয়ারের পাম্প দিয়ে তা সম্ভব নয়।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/12/Capture-23.jpg)
জেলা প্রশাসনের কাছে অন্তত দশটি ১০০ হর্স পাওয়ারের পাম্প চেয়েছিল এনডিআরএফ। সেই বার্তা রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি এখনও। বর্তমানে ঘটনাস্থলে এনডিআরএফ-এর ৭০ জন, এবং স্টেট ডিসাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এসডিআরএফ) ২২ জন কর্মী রয়েছেন।
গত ১৪ দিনে মাত্র তিনটি হেলমেট উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা আটকে পড়া শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে কিছু জানতে পারছেন না, বা ৩০০ ফুটের বেশি গভীর এই খনি বা তার আশেপাশের 'ইঁদুরের গর্ত' আয়তনের সুড়ঙ্গে তাঁদের অবস্থানও নির্ধারণ করতে পারছেন না।
বুধবার দুপুরে যখন তিনজন এনডিআরএফ ডুবুরি খনির গর্তে জলের স্তর - যা বর্তমানে প্রায় ৭০ ফুট - মাপার উদ্দেশ্যে নামার জন্য তৈরি হচ্ছেন, সিং তাঁদের বলেছিলেন, "দেখবেন জলের স্তর নেমেছে কী না। মনে হয় না নতুন করে পাম্প না করলে সেটা হবে। জলের গন্ধটা দেখবেন, আর ওপরে কিছু ভাসছে কী না দেখবেন।"
ক্রেনে করে নামলেন তিনজন। মিনিট পনেরো বাদে শোনা গেল শিসের আওয়াজ, আবার তুলে আনা হলো তাঁদের। উঠে এসে সিংকে তিনজন বললেন এই প্রথম তাঁরা "দুর্গন্ধ" পেয়েছেন। সিংয়ের প্রতিক্রিয়া, "উদ্ধারকারী হিসেবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশা ছাড়ি না আমরা। অঘটন তো ঘটে কখনো কখনো। কিন্তু এক্ষেত্রে, উদ্ধারের আশা খুবই কম। কিছুদিন আগে থাইল্যান্ডে গুহা থেকে যে শিশুদের উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখানকার চেয়ে এখানকার পরিস্থিতি অনেকটা জটিল।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/12/helmets.jpg)
তিনি আরো জানান, "খনির ভেতর জলের স্তর কমাতে পারি নি আমরা, কারণ খনি সংলগ্ন একটি ইঁদুরের গর্ত সুড়ঙ্গ নদীর সঙ্গে যুক্ত। কাজেই নদীর জল সমানে ঢুকছে, ফলে পাম্প করা সত্ত্বেও জলের স্তর ৭০ ফুটের নিচে নামছে না।"
এনডিআরএফ-এর ডুবুরিদের প্রশিক্ষণ ও নিয়ম অনুযায়ী, জলের স্তর ৪০ ফুটের বেশি হলে উদ্ধারের চেষ্টা করা যাবে না। এই প্রক্রিয়ার কারণ বোঝাতে গিয়ে সিং বলেন, "আমাদের ডুবুরিদের নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে পারে। মানুষের শরীর এত চাপ নিতে অভ্যস্ত নয়। যেহেতু আমরা ভেতরে যেতে পারি নি, তিনটি জরুরি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না: খনির মূলে কয়লা বের করার জন্য ক'টি ইঁদুরের গর্ত সুড়ঙ্গ খোড়া হয়েছে; ভিতের আয়তন কত; তার গভীরতা কত।"
লিটাইন নদী সংলগ্ন প্রায় পাঁচ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে কম করে রয়েছে ৮০টি পরিত্যক্ত কয়লাখনি। সিংয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, খনিতে জল কোথা দিয়ে ঢুকেছে, এই খনির সুড়ঙ্গ দিয়ে, না পাশের খনির সুড়ঙ্গ দিয়ে, তা এখনো জানা যায় নি। "নিচে এতগুলো ছোট ছোট খনি, যে সুড়ঙ্গের গোলকধাঁধা তৈরি হয়ে গেছে," বলছেন তিনি।
আরো পড়ুন: ক্যামেরার সামনে পোজ না দিয়ে মেঘালয়ে শ্রমিকদের বাঁচান: মোদীকে রাহুল
জাতীয় পরিবেশ আদালত ২০১৪ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও, মেঘালয়ে 'ইঁদুরের গর্ত' খনির কাজ এখনও রমরমিয়ে চলছে। এই প্রক্রিয়ার বিশেষত্ব হচ্ছে খুব সরু সরু সুড়ঙ্গ, উচ্চতায় খুব বেশি হলে তিন থেকে চার ফুট, যেখান দিয়ে শ্রমিকরা ঢুকে কয়লা বের করে আনেন।
ইতিমধ্যে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বুধবার রাতে টুইট করেন, "লাগাতার উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে এনডিআরএফ এবং রাজ্য সরকার। নদীর জল খনিতে ঢুকে যাওয়ার ফলে বড়ো চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। ভারত সরকার অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধার কাজে লোক পাঠিয়েছে।"