শিলিগুড়ি: করিমূলকে মনে আছে? ডুয়ার্সের করিমূল? ভ্যানে করে রোগীদের যথাসময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর কাজে নিযুক্ত থাকার জন্য যাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল? পদ্মশ্রী পাওয়ার পর ভারী বেগতিক বোধ হয়েছিল করিমূলের। দিকে দিকে তাঁর জন্য সংবর্ধনার আয়োজন। সর্বত্র সংবর্ধনা নিতে গিয়ে তিনি বুঝলেন, তাঁর আসল কাজটাই আর করা হয়ে উঠছে না।শুশ্রূষার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছতে গিয়ে না-হক কিছু টাকাও খরচ হয়ে যাচ্ছে তাঁর। সেই টাকাটা দরিদ্র মানুষের জন্যেই খরচ করতে চান তিনি। তাই সাধারণ মানুষের কাছে অ্যাম্বুলেন্স দাদার অনুরোধ "আমাকে সংবর্ধনা দিতে হবে না। আমার টাকাও চাই না। যদি পারেন সাধারণ মানুষের জন্যে জামা কাপড় দিন। পুরোনো জামা কাপড়ই দিন। তাদের জন্যে খাবার দিন।"
ক্রান্তির একটি ছোটো চা বাগানের বাসিন্দা করিমূল হক। চাবাগানের কর্মী তিনি। কয়েক বছর আগে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে হাসপাতাল নিয়ে যেতে না পারায় মৃত্যু হয় করিমূলের মায়ের। এরপর থেকে তিনি শপথ নেন গ্রামের কোনও মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেবেন না। সেই থেকেই নিজের ৫ হাজার টাকার মাইনের ১ হাজার টাকা জমানো শুরু করেন গরীবের জন্যে। এরপর কষ্ট করে একটি বাইক কেনেন তিনি। একদিন গ্রামের এক ব্যাক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তড়িঘড়ি বাইকে বসিয়ে নিজের পিঠের সঙ্গে বেঁধে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাণে বেঁচে যান ওই ব্যক্তি। ব্যস, এরপরেই পথ খুঁজে পেয়ে গেলেন করিমূল। মাথায় এসে গেল বাইক অ্যাম্বুলেন্সের কথা। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি ১৫জন বিকলাঙ্গ শিশুর তিনবেলার খাবারের দায়িত্ব রয়েছে তারই কাঁধে। শুধু তাই নয়, চেয়ে চিন্তে বেশ কয়েকটি ডোনার (Doner) স্কুল চালান তিনি। কোথাও কোনও অনুষ্ঠানে গেলেই গরিব মানুষের জন্যে পুরোনো জামাকাপড় চেয়ে নেন তিনি।
পদ্মশ্রী সম্মান আরও দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর (ফোটো- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা)
তাঁর এই সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতি মিলেছে জাতীয় স্তরে। ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ করিমূলকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়। সে সম্মানের যথাযোগ্য মর্যাদা রাখতেপদ্মশ্রী করিমূল এবার স্বউদ্যোগে হাসপাতাল বানাচ্ছেন নিজের বাড়িতেই। এ ব্যাপারে কোনও বিশেষ সংস্থা বা সরকারের সহায়তা মেলেনি এখনও। বিভিন্ন ব্যক্তির অনুদানই সম্বল।
এই অ্যাম্বুল্যান্সেই প্রাণ বাঁচিয়েছেন বহু রোগীর (ফোটো- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা)
মায়ের অকালমৃত্যু তাঁর মধ্যে যে শপথের জন্ম দিয়েছিল, কাউকে বিনা চিকিৎসার মরতে না দেওয়ার শপথ, তাকে জিইয়ে রেখেছেন পদ্মশ্রী করিমূল।