Ayodhya Ram Temple priests: রামমন্দিরের পুরোহিত হতে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে মাত্র ২১ জনের। এখন সেই ২১ যুবকই কঠোর অনুশীলনের মধ্যে রয়েছেন। নির্মীয়মান রামমন্দির থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে চলছে আচার-বিধি শেখার কাজ। বছর ৩০য়ের এই ২১ জনের মধ্যে থেকে রামলালার মূল মন্দিরের জন্য বেছে নেওয়া হবে মাত্রা কয়েক জনকে।
রাম মন্দির ট্রাস্টের এক কর্তা জানিয়েছেন, রামমন্দিরের পুরোহিত পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তাতেই মাত্র ২৩টি শূন্য পদের জন্য আবেদন করেছিলেন ২,৭০০ জন। এদের মধ্যে থেকে হয় ঝাড়াই বাছাই। এই প্রক্রিয়া যে কোনও কর্পোরেট অফিসে নিয়োগকে হার মানায়।
যে ২১ জন সুযোগ পেয়েছিলেন এখন তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য রোজ ভোর সাড়ে তিনটে থেকে চারটের মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে হয়। এরপর কয়েক ঘন্টা ধরে চলে মন্ত্র উচ্চারাণের তালিম। বৈষ্ণবদের রামানন্দী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য অনুসারে রাম পুজো করার পাঠ দেওয়া হয়। এই শীতের মধ্যেও এইসব যুবকদের মেঝেতে চাটাই বিছিয়ে কাঁথা-কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমোতে হয়। কঠোর সময়সূচী অনুযায়ী তাঁদের মন্ত্র উচ্চারণ, শাস্ত্রের জ্ঞান, চরিত্র গঠন, যোগাসনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি যখন প্রশিক্ষণ শিবিরে যান ততক্ষণে প্রশিক্ষণরত পুরোহিতদের বিরতির সময় হয়ে গিয়েছে। তাঁরা বিশ্রামে ছিলেন। ফলে ওইসব যুবকদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মীর কথায়, 'আমরা এই ছাত্রদের জন্য খাবার তৈরি করতে ভোর চারটের নাগাদ উঠি কারণ ওঁদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাঁরা যোগাসন এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে দিন শুরু করে, তারপরে সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় প্রশিক্ষণ, যা চলে দুপুর পর্যন্ত । বিরতির পরে,আবার শুরু হয় অনুশীলন।'
ওই কর্মীর মতে, এই প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে অনেকেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এবং কিছু বিহারের বাসিন্দা।
আরও পড়ুন- Ayodhya: ভূ-ভারতে নেই, তাক লাগানো বিলাসবহুল হোটেল পেতে চলেছে রামজন্মভূমি অযোধ্যা
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রশিক্ষণত পুরোহিতদের অন্যতম শিক্ষক, আচার্য মিথিলেশ নন্দিনী শরণ জানান, রামমন্দিরের পুরোহিত হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ২,৭০০ আবেদন পেয়েছিলেন, এরমধ্যে বাছাই করা হয় তিনশ জনকে। তার মধ্যে থেকে ২১ জনকে বেছে নিয়ে চলছে প্রশিক্ষণের কাজ। আবেদনকারীদের আচরণ, একাগ্রতা ও পারিবারিক পটভূমির উপর ভিত্তি করে তিশ জন থেকে প্রথমে ২৩ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। পরে, দু'জনকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ তাঁদের পরিবারের সদস্যরা রামলালার মূর্তি নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শিক্ষক, আচার্য মিথিলেশ নন্দিনী শরণের কথায়, 'এই প্রশিক্ষণরতদের একটি কঠিন নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ করতে হচ্ছে। তাঁদের সকাল তিনটেয় উঠতে হয় এবং আচার অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত হতে হয়। কারণ শ্রিংগারের জন্য এরপর তাঁদের ঠায় আড়াই ঘন্টা দাঁড়াতে হবে। তবে এঁরা অভিজ্ঞ পুরোহিতদের অধীনে কাজ করবেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে তাঁরা দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে উপযুক্ত। এই কারণেই বয়সসীমা তিরিশ বছরের নীচে রাখা হয়েছে। এখন কঠিন অনুশীলন করতে পারলেই ওই যুবকরা আরও ভালো কাজকরতে পারবে।'
সব প্রশিক্ষণরত পুরোহিতরা বিভিন্ন গুরুকুলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ফলে তাঁদের উচ্চারণ ভিন্ন, বর্তমানে যা সংশোধনের করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- Sanhati Yatra: অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিনই জোর ধাক্কা শুভেন্দুর! চওড়া হাসি মমতার
আচার্য শরণ জাবনিয়েছেন, যখন আচার্য কেশব ছাত্রদের বেদের ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তখন আচার্য সত্যনারায়ণ দাস তাদের 'প্রক্রিয়া' বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছেন। পাশাপাশি আচার্য জয়া কান্ত সঠিক 'উচ্চারণ' শেখাচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া, তাঁদের অর্থ সম্পর্কে সচেতন করছেন। সন্ধ্যায়, এই ছাত্ররা অযোধ্যার বিশিষ্ট মহন্ত কমল নয়ণ দাস এবং স্বামী রামানন্দ দাসের থেকে বাল্মীকি রামায়ণ এবং রামচরিতমানসের বর্ণনা শুনছেন।
শিক্ষার্থীরা এই বছরের মে মাস পর্যন্ত হওয়া ছয়'মাসের প্রশিক্ষণ পাঠের জন্য প্রতি মাসে দু'হাজার টাকা বৃত্তি পায়। এছাড়া তাঁদের সমস্ত খরচ এবং অন্যান্য ব্যবস্থা করে থাকে মন্দির ট্রাস্ট।
আচার্য শরণ বলেন, 'প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।' এঁদের মধ্যে কয়েকজনই মাত্র রাম মন্দিরের পুরোহিত হবেন। বাকিরা রামমন্দির চত্বরে থাকা অন্যান্য মন্দিরে কাজ করবেন।