পরিচয় গোপন করে লুকিয়ে ছিল দিঘার হোটেলে, NIA-র হাতে গ্রেফতার বেঙ্গালুরু ক্যাফে বিস্ফোরণকাণ্ডের ২ অভিযুক্ত। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫টি সিম কার্ড, ৩ রাজ্যের ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড।
বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে আইইডি বিস্ফোরণে জড়িত দুই অভিযুক্তকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণের অভিযুক্তরা নাম পরিবর্তন করে লুকিয়ে ছিল।বেঙ্গালুরু ক্যাফে বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ত্বহা ও শাজিবের কাছ থেকে ৩৫টি সিম কার্ড, জাল আধার কার্ড এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করেছে NIA-এর আধিকারিকরা।
বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণ মামলায় উভয় অভিযুক্তকে ১০ দিনের হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। ১২ এপ্রিল, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) কলকাতা থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে নিউ দীঘা থেকে মুসাব্বির হুসেন সজিব এবং আবদুল মাথিন ত্বহাকে গ্রেফতার করে NIA।
কলকাতার একটি আদালতে পেশ করার পর তাদের দুজনকে তিন দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে বেঙ্গালুরুতে আনা হয়। এরপর তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৩ এপ্রিল তাদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। সূত্রের খবর বলেছে যে রামেশ্বরম ক্যাফে বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের কাছ থেকে ৩৫টি সিম কার্ড, আধার কার্ড, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। জাল নথির সাহায্যে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তদন্তকারী সংস্থার হাত থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল অভিযুক্তরা।
তদন্তকারী আধিকারিকদের মতে, দুই অভিযুক্তই প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বাংলায় লুকিয়ে ছিল। আধিকারিকদের ধারণা, দিঘা ছাড়াও কলকাতা, পুরুলিয়া এবং দার্জিলিংয়েও থেকেছেন অভিযুক্তরা। এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তরা বেশ কয়েকবার তাদের নাম পরিবর্তন করেছে। তদন্তে জানা গিয়েছে কলকাতার দুটি হোটেলে থাকার সময় সজিব ভুয়ো আধার কার্ড ব্যবহার করেছিলেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, দুজনেই কলকাতার মোট ৪টি হোটেলে বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন।
এনআইএ সূত্রের খবর, হোটেলে থাকার জন্য তারা দুজনেই প্রায়ই ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার করতেন। কলকাতার হোটেল থেকে তাদের দুজনের সিসিটিভি ফুটেজও উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের পর অভিযুক্তরা কেন আত্মগোপনের জন্য বাংলাকে বেছে নিয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারী সংস্থা।
তদন্ত সংস্থার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, একটি জাল আধার এবং সেই আইডি দিয়ে সংগ্রহ করা একটি সিম কার্ড ১ মার্চ বেঙ্গালুরু ক্যাফে বিস্ফোরণের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
গত চার বছরে নিখোঁজ সন্দেহভাজনরা কোথায় ছিল?
পুলিশ সূত্রের মতে, ইসলামিক স্টেটের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ২০২০ সালের আগে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারে এমন ত্বহা এবং সাজিব, গত চার বছর ধরে প্রায়ই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে ভারতে বসবাস করছিলেন।
তারা গত চার বছরে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং অন্ধ্র প্রদেশের বেশ কয়েকটি স্থানে আত্মগোপন করে ছিলেন। এখন পর্যন্ত আইএস মডিউলের ১০ সদস্য বর্তমানে জেলবন্দী রয়েছে। ত্বহা, শাজিব এবং শরীফকে গ্রেফতারের পর মোট গ্রেফতারের সংখ্যা ১৩-তে পৌঁছেছে।
এর আগে NIA গত মাসে (২৬ মার্চ) বেঙ্গালুরু থেকে মুজাম্মিল শরীফকে গ্রেফতার করেছিল। শরীফ দুই অভিযুক্তকে রসদ সরবরাহ করেছিল। মুজাম্মিলকে গ্রেফতার করতে এনআইএ তিনটি রাজ্য কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং উত্তরপ্রদেশে অভিযান চালায়। তল্লাশির সময় কিছু নগদ টাকাসহ বেশ কিছু ডিজিটাল ডিভাইসও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এনআইএ জানিয়েছে যে সাজিব এই বিস্ফোরণের প্রধান অভিযুক্ত। তিনিই ক্যাফেতে আইইডি রেখেছিলেন। ত্বহা এই বিস্ফোরণের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনিই এই বিস্ফোরণের পুরো পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। এনআইএ তাদের দুজনের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।