গত সপ্তাহেরই কথা, এটিএমে স্কিমার নামক বস্তুকে কাজে লাগিয়ে এ শহরের বহু গ্রাহকের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। ফোন করে এটিএমের পিন নম্বর জেনে টাকা হাতানোর প্রাচীন কৌশলের পর স্কিমিং ডিভাইসের সাহায্যে টাকা লোপাটের ফন্দি তো জানা গেল। এরপর কী? আর কীভাবে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির শিকার হতে পারেন আপনি? এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রাক্তন এক ব্যাঙ্ককর্মী বলেছিলেন, "আপাতত আর তো কোনও পদ্ধতি নেই, তবে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আবার হয়তো কোনও ফন্দি বের করবে কেউ।" সেই ভবিষ্যদ্বাণীই যেন এবার মিলে গেল। এটিএম জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতেই আরও এক জালিয়াতির টোপ সামনে এল। মোবাইলের সিমকার্ডের মাধ্যমেই এবার জালিয়াতি করতে পারে প্রতারকরা, যার পোশাকি নাম ‘সিম সোয়াপ ফ্রড’। এটিএমে গিয়ে টাকা যদি নাও তোলেন, এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে আপনার টাকায় হাত দিতে পারে প্রতারকরা।
'সিম সোয়াপ' কী? জবাবে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "একটা সিম ডি-অ্যাক্টিভেট করে ব্ল্যাঙ্ক সিম কার্ডে কোনও নম্বর অ্যাক্টিভেট করাই হল সিম সোয়াপ। সোজা কথায়, আপনার সিম কার্ড প্রতারকদের কাছে চলে যাবে।" সন্দীপবাবুর বক্তব্য, বিভিন্ন টেলিকম সংস্থায় এ ধরনের প্রতারণা ইতিমধ্যেই হচ্ছে।
আরও পড়ুন, কীভাবে এড়াবেন এটিএম প্রতারণা? উত্তর দিলেন বিশেষজ্ঞরা
কীভাবে সিম সোয়াপ পদ্ধতিতে প্রতারণার শিকার হতে পারেন আপনি? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সন্দীপবাবু বোঝালেন, "লটারির টোপ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট টেলিকম সংস্থার হেল্পলাইন নম্বরে মেসেজ করতে বলবে ওরা। মেসেজে ‘SIM’ বলে লিখতে বলবে। একইসঙ্গে একটা ২০ ডিজিটের নম্বর লিখতে বলবে। আদপে ওই ২০ সংখ্যার নম্বরটি কোনও লটারির নম্বর নয়। এটা ওদের ব্ল্যাঙ্ক সিম কার্ডের নম্বর। যে মুহূর্তে আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল থেকে আপনি ‘SIM’ লিখে পাঠাবেন, সেই মুহূর্তে আপনার সিম কার্ড ডি-অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে। আর আপনার নম্বর ওদের ওই সিম কার্ডে অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে। সব ওটিপি প্রতারকদের কাছে চলে আসবে। ফলে অনায়াসে ব্যাঙ্ক প্রতারণার শিকার হতে পারেন আপনি।"
লটারির টোপই শুধু নয়, সিম কার্ড আপগ্রেড করার নামেও মেসেজ করতে বলা হতে পারে। আবার টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারের কাস্টমার সার্ভিস অফিসার সেজে ফোন করেও নানা তথ্য জানতে চাইতে পারে প্রতারকরা। ইদানিং এমন কারসাজিতে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সন্দীপবাবুর মতে, লটারির টোপ দিয়েই ব্যাঙ্ক প্রতারণা বেশি হচ্ছে। লটারির প্রলোভনে অধিকাংশ গ্রাহকই এই ফাঁদে পা-ও দিচ্ছেন।
কীভাবে এড়াবেন এই প্রতারণা? কী করণীয়?
১. ‘SIM’ লিখে কোনও মেসেজ করবেন না।
২. লটারি সংক্রান্ত কোনও মেসেজ পেলে, উপেক্ষা করুন। কখনই জবাব দেবেন না।
৩. ফোন করে আপনার সিমকার্ড সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে তা জানাবেন না।
৪. ফোন করে সিম ব্লক করার কথা বললে বা সিম আপগ্রেড করার কথা বললে, উপেক্ষা করুন।
৫. মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করছি বলে কোনও ফোন এলেও সাবধান হন। এমন ফোনকে গুরুত্ব দেবেন না।
৬. ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না।