ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

চলতি মাসের শুরুর দিকে এক সপ্তাহে ভারত থেকে পালিয়ে আসা ৭৪ জন রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসবেন।

চলতি মাসের শুরুর দিকে এক সপ্তাহে ভারত থেকে পালিয়ে আসা ৭৪ জন রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসবেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

গতবছর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ফাইল ছবি

ফজলুর রহমান রাজু

মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ জোর তদবিরে ব্যস্ত থাকলেও প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা শরনার্থীরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতও আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মায়ানমারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়। ভারতের এই উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। কিন্তু মায়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচারে দেশছাড়া রোহিঙ্গারা এখনই সেখানে ফিরে যেতে চান না। ফলে রোহিঙ্গারা আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী।

Advertisment

চলতি মাসে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী সমুদ্রপথে ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম জেলার কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। উখিয়া ‍কুতুবপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা মহম্মদ রেজাউল করিম এক ফোন সাক্ষাৎকারে ভারত থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা দু'জন উন্নয়নকর্মীও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, যে ভারত থেকে তাঁরা মায়ানমারে ফিরে গেলে আবারও নির্যাতনের শিকার হবেন। ফলে তাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন।"

আরও পড়ুন: কোথায় গেলেন বারুইপুরের রোহিঙ্গারা?

রেজাউল করিম জানান, চলতি মাসের শুরুর দিকে এক সপ্তাহে ভারত থেকে পালিয়ে আসা ৭৪ জন রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসবেন বলে তিনি জানান। তবে সঠিক সংখ্যা কত সেটা জানানো সম্ভব নয় বলেও তিনি মত দেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি মাসের প্রথম ১০ দিনে ১১১ টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৬৮ জন সদস্য কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের কাছের স্থাপিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এঁরা সবাই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। নতুন আসা এসব সদস্যরা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

Advertisment

publive-image ট্রানজিট পয়েন্টে রয়েছেন বহু শরণার্থী। ফাইল ছবি

টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, সম্প্রতি ভারত থেকে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার পালিয়ে বাংলাদেশে আসছেন। তিনি আরও জানান, তাঁদের ক্যাম্পে কাশ্মীর থেকে আসা কয়েকটি পরিবারও আশ্রয় নিয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ড রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মহম্মদ জানান, জোহর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সহ এক পরিবারের ছ'জন রোহিঙ্গা কাশ্মীর থেকে পালিয়ে এসে তাঁদের শিবিরে পৌঁছন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, ভারত থেকে আসা শরণার্থীদের কাছে ভারত সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর দেওয়া আইডি কার্ডও রয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, চলতি মাসে ভারত থেকে পালিয়ে আসা দেড়শতাধিক রোহিঙ্গা সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। এঁদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এসব রোহিঙ্গাদের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়। পরে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এও জানান, অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীই ধরে পড়েন না। অনেকে গোপনে ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এই বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও ইউএনএইচসিআর-এর কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

Bangladesh Rohingya