বিয়ের পর প্রথম ইদে স্ত্রীকে জামাকাপড় কিনে দিতে সোনার চেন বিক্রি করেন নিহত যুবক

স্ত্রীকে নিয়ে কানাকাটার পথেই মাঝরাস্তাতেই দুষ্কৃতী হানায় মৃত্যু হয় যুবকের।

স্ত্রীকে নিয়ে কানাকাটার পথেই মাঝরাস্তাতেই দুষ্কৃতী হানায় মৃত্যু হয় যুবকের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

স্ত্রীকে নিয়ে কানাকাটার পথেই মাঝরাস্তাতেই দুষ্কৃতী হানায় মৃত্যু হয় যুবকের।

বি নাগারাজু বিয়ের পর প্রথম ইদ উপলক্ষে স্ত্রীকে জামাকাপড় কিনে দেওয়ার জন্য নিজের সোনার চান পর্যন্ত বিক্রি করেন। খুনে কয়েক ঘন্টা কাটতে না কাটতেই সামনে এসেছে এমনই তথ্য। শুক্রবার, হায়দ্রাবাদ পুলিশ জানায়, ‘খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে’। ধৃত দুজনেই তরুণীর নিকট আত্মীয় বলে জানিয়েছে হায়দ্রাবাদ পুলিশ।

Advertisment

হায়দরাবাদের সরুরনগরের এই ঘটনায় খুন হয়েছেন এক যুবক। নিহত যুবকের নাম বি নাগারাজু। বয়স ২৫ বছর। সম্প্রতি তিনি আসরিন সুলতানা নামে বছর ২৩-এর এক যুবতীকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু, নাগারাজু হিন্দু হওয়ায় এই বিয়ে মানতে পারেনি আসরিনের পরিবার। তাঁদের বাড়ির লোকজন লোহার রড নিয়ে নাগারাজুর ওপর হামলা চালায়। এরপর তাঁর ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময়, শহরের একটি গাড়ির শো’রুমের ম্যানেজার কে সতীশ বলেন, “তার শো’রুমেই সেলসের কাযে গত মার্চেই যোগ দিয়েছিলেন বি নাগারাজু”। তিনি বলেন “সম্প্রতি নাগারাজুর বিয়ের কথা জানতে পেরেছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদেই ওই যুবক তাকে জানান, তিনি তার স্ত্রীকে ঈদের কেনাকাটা করতে চারমিনারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকায় তার সোনার চেন তিনি বিক্রি করেছেন”।

তিনি আরও বলেন, ‘বি নাগারাজু একজন অত্যন্ত সৎ এবং পরিশ্রমী ব্যক্তি ছিলেন, খুব নিরীহ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তিনি”। বুধবার সন্ধ্যায় দেরি হওয়ার কারণে পোশাক না বদলেই তিনি তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যান’। স্ত্রীকে নিয়ে কানাকাটার পথেই মাঝরাস্তাতেই দুষ্কৃতী হানায় মৃত্যু হয় যুবকের।

Advertisment

আরও পড়ুন: কয়লাকাণ্ডে চরম অস্বস্তিতে অভিষেক-পত্নী, জামিন অযোগ্য ধারায় জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা

নাগারাজুর বন্ধু তালারি দানিয়া বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আশরিনের বড় ভাই মুবিন সৈয়দ প্রায় সময় তাদের দুজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন, রোজ কাজে যাওয়ার সময় নাগারাজু তার স্ত্রীকে তার বোনের বাড়িতে রেখে যেতেন’। হায়দ্রাবাদ পুলিশ সূত্রে জানা যায় আশরিনের বড় ভাই মুবিন, একজন ফল বিক্রেতা এবং তার আত্মীয় মাসুদ, যিনি একজন গাড়ির মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। ৩১শে জানুয়ারি আর্য সমাজ মন্দিরে দম্পতির বিয়ের পরপরই নাগারাজুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দু’জন। তখন থেকেই হামলার ছক কষতে থাতে তারা।

ছোটবেলা থেকেই প্রেম বি নাগারাজু এবং আসরিন সুলতানার। বাড়ির চাপে পালিয়ে বিয়ে করেও শেষ রক্ষা হল না। আলাদাই থাকছিলেন তারা। বুধবার সন্ধ্যায় তারা বাইক নিয়ে বাইরে বের হন। মাঝ রাস্তায় তাদের বাইক আটকায় কয়েকজন যুবক। প্রকাশ্য রাস্তায় বাইক থেকে নামিয়ে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে, শেষে একাধিবার ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় যুবককে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাগারাজুর। তার মাথা সম্পূর্ণ থেতলে দেওয়া হয়। এরপর সকলের সামনে দিয়েই পালিয়ে যায় আততায়ীরা। সুলতানা পুলিশকে জানিয়েছেন, হিন্দু হয়ে কেন নাগারাজু তাকে বিয়ে করেছে, এই নিয়ে একাধিকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে তাদের। শেষপর্যন্ত ঘটল এমন মর্মান্তিক হত্যা।

পুলিশের কাছে সুলতানা জানিয়েছেন, আক্রমণকারীদের মধ্যে একজন তার ভাই। সবমিলিয়ে পাঁচজন আক্রমণ করেছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। হায়দরাবাদ পুলিশ আক্রমণকারীদের ধরতে বিশেষ তদন্ত দল তৈরি করেছে। ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ সুনপ্রীত সিং বলেছেন যে তারা মামলাটির দ্রুত বিচার আদালতে বিচারের জন্য আবেদন করছেন। শুক্রবার, তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দররাজন নাগারাজু হত্যার বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠান। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত ছুরি ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে।

Read story in English