ইন্দোরের বিজেপি বিধায়ক তথা কৈলাশ-পুত্র আকাশ বিজয়বর্গীয় হাতে প্রহৃত হওয়ার তিন দিন পরও আতঙ্ক কাটছে না ইন্দোর পৌরসভার আধিকারিক ধীরেন্দ্র ব্যাসের। এমনকী পুলিশি নিরাপত্তার দাবিও জানান তিনি। বুধবার কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র ছেলে আকাশ বিজয়বর্গীয়র হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর এই প্রথমবারের জন্য মুখ খুলে 'সানডে এক্সপ্রেস'কে প্রহৃত আধিকারিক বলেন, "কোনও রকম বাহ্যিক প্রভাবে নয়, স্বতস্ফূর্ত ভাবেই এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ছেলে"।
উল্লেখ্য, ইন্দোরের একটি বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে জুন (বুধবার) কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র পুত্র আকাশ বিজয়বর্গীয়র বিধানসভা এলাকাতে অভিযান চালায় স্থানীয় পুরসভা। আসন্ন বর্ষার কথা মাথায় রেখেই এলাকার এক বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু এই বিপজ্জনক বেআইনি নির্মাণ ‘রক্ষা করতে’ই ব্যাট হাতে এগিয়ে আসেন মারমুখী বিজেপি বিধায়ক আকাশ বিজয়বর্গীয়। হুমকির সুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "১০ মিনিটের মধ্যে এলাকা না ছাড়লে ফল ভালো হবে না"। এরপরই কর্তব্যরত আধিকারিক ধীরেন্দ্র ব্যাসকে মারধর করেন আকাশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই তোলপাড় হয় দেশএবং গ্রেফতার হন আকাশ বিজয়বর্গীয়। তিন দিন হাজতবাসের পর শনিবারই জামিনে মুক্ত হন আকাশ।
WATCH: Indore BJP MLA Akash Vijayvargiya, son of @KailashOnline, attacks officials from anti-encroachment team that arrived to demolish a structure
READ: https://t.co/yU413QBS1R pic.twitter.com/MHTwisFBPF
— The Indian Express (@IndianExpress) June 26, 2019
আকাশের জামিনে মুক্তির খবর পৌঁছেছে প্রহৃত ধীরেন্দ্রর কানেও। এরপরই তিনি জানিয়েছেন যে সেদিনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাঁকে তাড়া করছে এখনও।
আরও পড়ুন আধিকারিককে মেরে শ্রীঘরে, তবু বিজেপির ‘বাঘের বাচ্চা’ আকাশ বিজয়বর্গীয়
প্রসঙ্গত, ধীরেন্দ্র ব্যাস ১৯৯২ সাল থেকে ইন্দোরের পৌরসভায় কর্মরত। বর্তমানে তিনি পৌরসভার জোনাল অফিসারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ২৫ জুনের ঘটনা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, "যখন এলাকায় পৌঁছই, তখন পুলিশ আমাদের সঙ্গেই ছিল। আকাশজি আমাদের বলেন, ওনারাও আসছেন, আমরা যেন অপেক্ষা করি। উনি আসার পর আমি নই, আমার সিনিয়র অফিসার ওনার সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে বলা হয়, বাড়িটি যথেষ্ট বিপজ্জনক, এই সেই মর্মে ১৯ জুন পুরসভার তরফে বাড়িটি ভেঙে ফেলার একটি সার্কুলারও প্রকাশ করা হয়"। ধীরেন্দ্র আরও জানান," যখন আমরা তাঁকে বাড়িটির অবস্থা দেখাই উনি বলেন, আপনারা ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে এখান থেকে চলে যান, নয়তো আমরা আপনাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য হব। আপনার নিশ্চই ভিডিওতে দেখেছেন যে আমি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। জানেন, ওঁর সঙ্গে আমার যথেষ্ট সুসম্পর্কও ছিল। উনি আমাকে 'ব্যাসজি' বলে সম্বোধনও করতেন, আমি 'আকাশজি' বলে সম্বোধন করতাম। হঠাৎ কী হল জানি না, উনি আমার ওপর ব্যাট হাতে চড়াও হলেন!"
আক্রান্ত পুর আধিকারিক ধীরেন্দ্র ব্যাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীনও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সে সময় জানান, "আমার বিশাল কিছু আঘাত লাগেনি। আমার কিছু শারীরিক সমস্যা আছে অনেক আগে থেকেই, সেই কারণেই হাসপাতালে আছি। সেদিনের ঘটনায় বড় রকমের কোনও আঘাত পাইনি আমি"। আকাশ বিজয়বর্গীয়র এই কীর্তি প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল, অফিসাররা সেখানকার মহিলা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে। আর তাতেই রেগে যান আকাশ। কিন্তু, বিজেপির এই দাবি অস্বীকার করেন আক্রান্ত ধীরেন্দ্র বলেন, "এরকম কিছুই ঘটেনি সেদিন। সবাই সেদিন উপস্থিত ছিল। এমনকী মিডিয়ার লোকজনও ছিল, পুলিশও ছিল। কেন আমরা এরকম করব? এর কোনও প্রমাণও নেই, কারণ এরকম কিছুই হয়নি বাস্তবে। আমি ওই বাড়িতেই ঢুকিনি। আর কেনই বা একটা ভাঙা বাড়িতে আমি ঢুকতে যাবো"?
আরও পড়ুন কাশ্মীরের এক-তৃতীয়াংশ হাতছাড়া হওয়ার কারণ নেহরু, বললেন অমিত শাহ
এই ঘটনায় তিনি কতটা ভীত, সে প্রশ্ন করতেই ধীরেন্দ্র ব্যাস বলেন, "আপনি যদি ভাল করে দেখেন, তাহলে দেখবেন যারা আমাদের আক্রমণ করেছিল তারা গুন্ডা। তাই ভবিষ্যতে তাঁরা যে আমাকে আক্রমণ করবে না এই ব্যাপারে কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না। অবশ্যই আমি ভীত। পুলিশি নিরাপত্তার জন্য আমি পুলিশ সুপারকে চিঠি লিখেছি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। ঘটনার দিন এলাকার সবাই আমার পাশে ছিলেন। কারণ, আমি এখানে পনেরো-কুড়ি বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। গুন্ডারা অন্য এলাকার লোক। ওয়ার্ডের সকলে অবাক এই ধরনের ঘটনায়"।
তবে সেদিনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি এখনও টাটকা থাকলেও নিজের কাজে অবিচল ধীরেন্দ্র ব্যাস। তিনি বলেন, "আমি আমার পেশাগত অবস্থান থেকে বলতে পারি, যত শীঘ্র সম্ভব বাড়িটিকে সম্পূর্ন ভেঙে ফেলা উচিত। যারা ওই বাড়িটির সামনে দিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁরাও দেখেছেন ওই বাড়িটির বেশিরভাগ অংশই ভেহে পড়েছে"।
Read the full story in English