কুলভূষণ যাদব প্রসঙ্গে আর্ন্তজাতিক ন্যায় আদালতের রায় কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের বড় সাফল্য বলে মনে করছে আর্ন্তজাতিক মহল। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে দিল্লি। তার জেরে পুরনো বন্ধু রাষ্ট্রগুলির একাংশ আগেই ইসলামাবাদের পাশ থেকে সরে গিয়েছে। এবার কুলভূষণ-রায়ের পর পাকিস্তান বিশ্ব রাজনীতিকে আরও বেশি কোণঠাসা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আর্ন্তজাতিক ন্যায় আদালত বুধবার কুলভূষণকে দূতাবাস-সুরক্ষার অধিকার দিয়েছে। পাশাপাশি, ইসলামাবাদকে বলা হয়েছে, কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা সংক্রান্ত রায়টিকে পুর্নবিবেচনা করতে। কিন্তু ভারতীয় কূটনীতিবিদদের একাংশের মত, দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ব রাজনীতিকে কোণঠাসা করার যে প্রক্রিয়া ভারত শুরু করেছিল, এই রায় তাকে ত্বরান্বিত করবে।
সম্প্রতি ভারতের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক সাফল্য জইশ-ই-মোহাম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের নাম আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় ওঠা। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক তৈরি এই তালিকায় মাসুদের নাম তোলার জন্য ভারত দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু চীনের বিরোধিতায় তা সম্ভবপর হচ্ছিল না। সম্প্রতি চীন এই ইস্যুতে অবস্থান পরিবর্তন করে। ভারতীয় কূটনীতিকদের দাবি, আর্ন্তজাতিক পরিসরে মাসুদ-প্রশ্নে ঐক্যমত গড়ে তুলতে সফল হয়েছিল দিল্লি। সেই কারণেই মত বদলাতে বাধ্য হয়েছিল বেজিং। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে সংসদ হামলা থেকে শুরু করে হালের পুলওয়ামায় জঙ্গি-হানা-সহ অসংখ্য সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে নাম জড়িয়েছে মাসুদের।
আরও পড়ুন, অযোধ্যা মামলায় মধ্যস্থতা জারি, সুপ্রিম শুনানি ২ অগাস্ট থেকে
হাফিজ সইদ সংক্রান্ত বিতর্কেও সম্প্রতি পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইসলামাবাদ। ভারতের চাপ সত্ত্বেও দীর্ঘদিন হাফিজের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পাক-প্রশাসন। সম্প্রতি আর্ন্তজাতিক চাপের মুখে গত বুধবার জামাত-উদ-দাওয়া প্রধানকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে তারা।
গত দু-বছর যাবত ভারত পাকিস্তানকে প্রথমে ধূসর তালিকাভূক্ত এবং পরে কালো তালিকাভূক্ত করার চেষ্টা করে আসছে। এই প্রচেষ্টা সম্প্রতি সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে। ইসলামাবাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু চীনও পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা দূরত্ব বাড়িয়েছে।
আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে ভারত আরও একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মুখ দেখেছে গত ফেব্রুয়ারিতে। পুলওয়ামায় হামলার পর নিরাপত্তা পরিষদ পাকিস্তানে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিল। সেই বিবৃতিতে চীনও সই করেছিল। দিল্লির দাবি, ওই ঘটনা পাকিস্তানকে আরও কোণঠাসা করেছে।
পুলওয়ামা হামলার পর আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেরও সমর্থন পেয়েছিল ভারত। ওয়াশিংটন জানিয়েছিল, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। বালাকোটে পাল্টা হানার পর আর্ন্তজাতিক মহলের বিপুল সমর্থন পেয়েছিল নতুন দিল্লি। অভিনন্দন বর্তমানের ঘটনাতেও আর্ন্তজাতিক মহলে ইসলামাবাদকে কোণঠাসা করতে করেছিল ভারত।
আর্ন্তজাতিক ন্যায় আদালতের কুলভূষণ-রায়কে ভারতের বিদেশমন্ত্রক স্বাগত জানিয়ে বলেছে, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই ভিয়েনা কনভেনশনের শর্তগুলিকে লঙ্ঘণ করছে। এই রায় ভারতের সেই দাবিতেই মান্যতা দিল।
Read the full story in English