প্রতিপক্ষ হামলা করলে রণক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে। সেজন্য বাহিনীকে বলপ্রয়োগের পূর্ণ কর্তৃত্ব ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ভারত-চিন সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় রবিবার সেনা কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানেই বাহিনীর হাতে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে।
প্রটোকল অনুসারে এতদিন ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করত না ভারতীয় সেনা। কিন্তু, চিনা আগ্রসন ক্রমশ বাড়ছে। গালওয়ান উপত্যকায় প্রাণ গিয়েছে ২০ ভারতীয় সেনাকর্মীর। এই পরিস্থিতিতে 'রুল অফ এনগেজমেন্ট' আগেই বদল করেছে ভারত। মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ভারতীয় সেনারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। দিল্লির অনুমতির প্রয়োজন নেই। এবার বেগতিক বুঝলে সেনাকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতাও দেওয়া হল।
রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনার আগে রাজনাথ সিং চিফ ওফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত, সেনা প্রধান জেনারেল এন এম নারাভানে, নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল করমবীর সিং ও বাযুসেনা প্রধান চিফ মার্শাল আর কে এস বাহাদুরিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। লাদাখ সহ ভারত-চিনের ৩,৪৮৮ কিমি দীর্ঘ সীমান্তের সুরক্ষা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় বৈঠকে। সূত্র অনুসারে, বৈঠকে বলা হয়েছে, 'ভারত উত্তেজনা চায় না। কিন্তু, চিনের দিক থেকে বিরূপ পদক্ষেপ নজরে এলেই সেনাকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।' সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনী প্রকৃত পরিস্থিতি ভালো করে বুঝতে পারবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনার প্রতি সরকারের পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে নয়াদিল্লি। এতেই মাথা ব্যাথা বেড়েছে বেজিংয়ের। রবিবারের বৈঠকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, সীমান্তে পরিকাঠামো উন্নয়নের যে কাজ চলছে তা অব্যাহত থাকবে। তিন বাহিনীর তরফেও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাহিনীর প্রস্তুতিই চূড়ান্ত। লাদাখ, প্যানগং সহ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনাকে নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকী আকাশ ও জলপথেও নজরদারি কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে ভারত-চিন সীমান্ত নিয়ে সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছিলেন যে, 'বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।' পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, 'এবার সংখ্যার প্রচুর চিনা বাহিনী হামলা চালিয়েছিল, সামঞ্জস্যপূর্ণ জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।'
গালওয়ান তাদের বলে দাবি করেছে চিন। সেই দাবি নস্যাৎ করেছে নয়াদিল্লি। গালওয়ানে এখনও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে দু'দেশের বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনা চরমে। নিয়ন্ত্রণরেখার বিভিন্ন সেক্টরে বহিনী মোতায়েন বাড়িয়েছে ভারতীয় সেনা। যেকোনও মুহূর্তে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা।
ইন্দো-চিন সীমান্তে যেকোনও পরিস্থিতির জন্য বাহিনীকে তৈরি থাকতে বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তাঁর কথায়, 'শুধু লাদাখে নয়, নিয়ন্ত্রণরেখায় যেকোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।' তাহলে কী ভারতের পক্ষ থেকে প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনাই ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন