রবিবার রাতে বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে বেলান্দুরে পুলিশ ও পুরকর্মীরা একযোগে বেশ কিছু অস্থায়ী বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বহু পরিবার রাস্তায় এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশের দাবি এখানকার ভাড়াটিয়ারা সকলে বেআইনি বাংলাদেশি অভিবাসী। জমির মালিককে উৎখাতের নোটিস পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। তবে পুলিশের বক্তব্য মানছেন না সমাজকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, এখানে যাঁরা থাকতেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কর্নাটকের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, থাকতেন উত্তর ও উত্তর পূর্ব ভারতের মানুষজনও। এঁরা বেঙ্গালুরুতে গৃহকর্মী, নির্মাণকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করে থাকেন।
বৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকা ও পুলিশের এই হানার নিন্দা করে আইনজীবী তথা সমাজকর্মী বিনয় শ্রীনিবাস বলেছেন, ২০০-র বেশি অস্থায়ী বাড়ি ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। "যারা ভাঙতে এসেছিল তাদের মধ্যে অনেকেই সাদা পোশাকে এসেছিল। তাদের বক্তব্য তারা মারাঠাহাল্লি পুলিশের লোক, পুরকর্মীদের সুরক্ষা দিতে এসেছে। কিন্তু এলাকায় কোনও পুরকর্মীর দেখা পাওয়া যায়নি।"
"আমরা যখন জিজ্ঞাসা করলাম এরকম কেন করা হচ্ছে, তাতে তারা বলল এখানকার লোকজন বেআইনি বাংলাদেশি। আমরা যখন নির্দেশের কপি দেখতে চাই তখন তারা ভাঙা বন্ধ করে। অস্থায়ী বাড়িতে যদি বাংলাদেশিরা বাস করে, তাহলে তাদের প্রথমে চিহ্নিত করা হোক, তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সব বাড়ি ভাঙার দরকার কী!"
এই হানার ব্যাপারে পুরসভা বা পুলিশ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
আরও পড়ুন: মমতার বড় পদক্ষেপ, সিএএ বিরোধী প্রস্তাব আসছে বঙ্গ বিধানসভায়
গত ১১ জানুয়ারি মারাঠাহাল্লি থানা ইন্সপেক্টর চেতন বাবু নামের এক জমি মালিককে করিয়াম্মা আগ্রহারায় উচ্ছেদের নোটিস পাঠায়। সে চিঠিতে পুলিশ সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্ট ও ভাইরাল হওয়া ভিডিওর উল্লেখ করে। সেগুলিতে দাবি করা হয়েছিল বেলান্দুরে একটি বেআইনি বাংলাদেশিদের আস্তানা রয়েছে। নোটিসে বলা হয়েছিল, আস্তানা ভেঙে দিয়ে ওদের উচ্ছেদ করুন।
চেতন বাবু বলেন, "এই আস্তানায় যাঁরা থাকেন, তাঁরা সকলেই এদেশি। সকলের কাথে নথি রয়েছে, কিন্তু পুলিশ যেহেতু নোটিস দিয়েছে, আমরা তাই উচ্ছেদ করেছি।"
এখানকার যাঁরা বাসিন্দা, তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের কোনও খবর না দিয়েই বাড়ি ছাড়তে বলা হয়েছে। কুমার দাস নামের একজন জানালেন, "আমরা ভারতীয়, আমাদের কাগজপত্র আছে। পুলিশ এসে কোনও নোটিস না দিয়ে বাড়ি ভাঙতে শুরু করে দিল। এখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর কর্নাটকের বাসিন্দা।"
গত ১২ জানুয়ারি, মহাদেবপুরার বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিমবাভালি টুইট করে বলেন, বাংলাদেশের লোকজন এই এলাকায় বাস করছে।
তিনি লিখেছিলেন, "করিয়ামানা আগ্রহারা এলারায় কিছু লোক বেআইনি আস্তানায় আশ্রয় নিয়েছে। এ এলাকা মহাদেবপুরা বিধানসভার মধ্যে পড়ে। এসব জায়গায় বেআইনি কাজকর্ম চলছে, এদের জন্য পরিচ্ছন্নতার অভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, এ এলাকা বেআইনি কাজকর্মের ঘাঁটি হয়ে উঠছে।"
তিনি লেখেন, "সোশাল মিডিয়ার সূত্রে এ বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আধিকারিকরা পর্যালোচনা করছেন ও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অন্য জায়গা থেকে লোক এসে এখানে বসবাস শুরু করেছে, এদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশের বেআইনি অভিবাসীও রয়েছে।"