কলেজে কলেজে ভর্তি নিয়ে তোলাবাজি আটকাতে আসরে নামতে হল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে। কয়েকদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের তৃণমূল স্তরের তোলাবাজদের নাম ও ছবি প্রকাশ পাওয়ায় মুখ পুড়ছিল শাসকদলের। পরিস্থিতি যে আয়ত্তে নেই তা বেশ বোঝা যাচ্ছিল। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে তোলাবাজি সংক্রান্ত খবর দেওয়ার জন্য প্রকাশ্য বিবৃতি দেওয়ার পর স্পষ্ট হয়েছিল, রাশ টানতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু শুধু পুলিশকে সক্রিয় করাই যথেষ্ট নয় বলে বোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি নিজেই হাজির হলেন আশুতোষ কলেজে। সোমবার দুপুরে সেখানে গিয়ে মমতা জানিয়ে দেন, ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যত নিয়ে কোনও আপস করা হবে না, যে বা যারা ছাত্ররাজনীতির নামে ভয় দেখিয়ে, জলুম করে টাকা তুলবে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ সোমবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এবিষয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও আজ জয়পুরিয়া কলেজ পরিদর্শনে যান।
এর আগে এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর একাধিকবার তোলাবাজি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। সক্রিয় হয়েছিল পুলিশও। কয়েকদিন আগেই মহারাজা শ্রীশচন্দ্র কলেজে ভর্তির নাম করে জোর করে টাকা আদায় করার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে রীতেশ জয়সওয়াল (২৩) এবং লালসাহেব গুপ্ত (২৫) নামক দুজনকে। সোমবার সকালে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জয়পুরিয়া কলেজের প্রাক্তন ছাত্রনেতা তিতান সাহাকে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিতানের বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয় তালিকায় রয়েছে আরও ১৭টি নাম। তিতানের সঙ্গে জয়পুরিয়া কলেজের আরও এক প্রাক্তন ছাত্র তথা প্রাক্তন জিএস শিশির ভাদুড়িকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তোলাবাজির অভিযোগের তালিকায় নাম রয়েছে শিয়ালদহ সুরেন্দ্রনাথ কলেজের এক গ্রুপ ডি কর্মীরও। রাতুল ঘোষ নামে ওই যুবকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে অ্যাডমিট কার্ড, অ্যাডমিশন ফর্ম, মার্কশিট সহ সহ বেশ কিছুগুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে তোলাবাজি র্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এরা প্রত্যেকেই। অনলাইনে একাধিক অভিযোগ পেয়েই অভিযান শুরু করে পুলিশ।
এত কিছুর মাঝেও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ছবিটা এখনও বদলায়নি। শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভেরিফিকেশনের শেষ তারিখ ছিল ২৮ জুন। মেধা তালিকার প্রথম দিকে নাম ছিল নিউটাউনের বাসিন্দা এক ছাত্রীর। ২ জুলাইতেও কলেজের বাইরেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেল তাঁকে। নিয়ম মেনে যথাসময়ই অনলাইনে টাকা দিয়ে ভর্তি পর্ব মিটিয়েছেন তিনি। তবে তারিখ পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁর ভর্তি প্রক্রিয়া এগোয় নি এতটুকুও। তাঁর অভিযোগ, অনলাইনে টাকা জমা করে দেওয়ার পরও ভর্তির জন্য় তাঁর থেকে বাড়তি ৭০০০ টাকা চাওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে। একই অবস্থা আসানসোল থেকে আসা আর এক ছাত্রীর। অনলাইনে ভর্তির পর ভেরিফিকেশনের জন্য সোমবার সকালে কলেজে এসেছিলেন তিনি। তবে সব জানানোর পরও কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় তাঁকে।
ইতিমধ্যেই প্রায় বেশিরভাগ কলেছেই অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়া মিটে গিয়েছে। প্রথম দফার ভর্তিও শেষ। তবে সব মিলিয়ে কার্যত ভয়ে তটস্থ হয়ে রয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। ভবিষ্যত নিয়ে এমন অনিশ্চয়তায় স্বভাবতই কপালে ভাঁজ পড়ুয়া সহ তাঁদের পরিবারেরও। মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সশরীরে আসরে নামার পর ভর্তি ভোল পাল্টাবে কি না, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।