Advertisment

Coromandel Express Accident: 'ভয়াবহ দৃশ্য, চিরকাল এ আতঙ্ক বয়ে বেড়াব', দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় বর্ণনা দিতে দিতে বলছিলেন 'ভাগ্যবান' যাত্রীরা

দুর্ঘটনার নানা দৃশ্য মনে করেই শিউরে উঠছেন বরাত জোরে প্রাণে বাঁচা যাত্রীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Odisha train accident survivors from Karnataka recount horror says images will haunt me for life , 'ভয়াবহ দৃশ্য, চিরকাল এ আতঙ্ক বয়ে বেড়াব', দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় বর্ণনা দিতে দিতে বলছিলেন 'ভাগ্যবান' যাত্রীরা

ধ্বংসস্তূপের নিচে কোন ভয়াবহ দৃশ্য অপেক্ষা করছে? ভেবেই ভয় পাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।

কিছু একটা ঘটেছে। সেটা বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু এত বড় বিপত্তি! ট্রেন থেকে নেমেও প্রথমে তা ঠাওর করতে পারেননি ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। ট্রেন থামলে নিচে নামতেই প্রথমে চারদিকে নিকষ-কালো অন্ধকারে কিছুই ধরা পড়ছিল না। কিন্তু, মোবাইলের আলো জ্বালাতেই সে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা। কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে থাকা যাত্রীরা দেখেন দু'টি ট্রেনের সংঘর্ষে একটি ইঞ্জিন অন্যটির মাথায়। কামরাগুলো ছিটকে পড়েছে চারধারে। শুধুই ধ্বংস্তূপ। রেল ট্র্যাকে রক্তের বন্যা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন অনেকে। কারোর হাত বেরিয়ে রয়েছে, কারোর দেহ থেঁতলে গিয়েছে। অসহনীয় দৃশ্য। দুর্ঘটনার সময় ও তার পরের ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে শিউরে উঠছিলেন বরাত জোড়ে কোনক্রমে বেঁচে যাওয়া বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকজন যাত্রী। সবারই মুখে এক কথা- যা দেখেছেন তা চির জীবন আতঙ্কের মত তাড়িয়ে নিয়ে যাবে।

Advertisment

অন্ধ্রপ্রদেশের চিক্কামাগালুরু জেলার কালাসার বাসিন্দা জৈন (৪১) শুক্রবার রাতে ভয়াবহ সেই সময়গুলোর ব্যাখ্যা করছিলেন। জৈন হাওড়াগামী বেঙ্গালুরু সুপারফাস্টের সেইসব ভাগ্যবান যাত্রীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলছিলেন যে, 'তখন রাত সাড়ে প্রায় ৮টা। ট্রেনটা হঠাৎ থেমে গেল এবং একটা বিকট আওয়াজ হল। আমাদের কামরার পিছনের বগিগুলো, এসি এবং জেনারেল- যা বিপরীত ট্র্যাকের কোমণ্ডল এক্সপ্রেসকে ধাক্কা। এতে আাদের সহ বেশ কয়েকটি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।'

জৈন বলছিলেন যে, 'প্রাথমিকভাবে, ট্রেনটি থামার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কোচের যাত্রীরা বুঝতে পারেনি যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু লোকেরা যখন ট্রেন থেকে নামছে আমরা লক্ষ্য করি যে পিছনের কয়েকটি কামরা নেই। আর দুর্ঘটনার নানা ছাপ। অন্ধকার হওয়ায় আমরা মোবাইল ফোনের টর্চ ব্যবহার করে ট্র্যাকে হাঁটা শুরু করলাম। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে গিয়ে দেখি ট্র্যাক রক্তে ভরা, মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। আমি সেই দৃশ্য কখনই ভুলতে পারব না।'

আরও পড়ুন- Coromandel Express accident: ‘আমার মেয়ে আহত কিন্তু বেঁচে আছে’, দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাওড়া স্টেশনে বললেন বাবা

'পাশের গ্রামের বেশ কিছু লোক ট্রেনের ভেতরে ঢুকে লোকজনকে ততক্ষণে উদ্ধার শুরু করেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরায় পৌঁছতে মই নিয়ে এসেছিলেন ওঁরা। গ্রামবাসীরা একে একে লাশগুলো বের করে ট্র্যাকের পাশে রাখছিলেন। এটা সত্যিই বেদনাদায়ক ছিল এবং আমি যা দেখছিলা তা সহ্য করতে পারছিলাম না।' বলেন জৈন। তাঁর দাবি, এর কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এবং অ্যাম্বুলান্স ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।

ওই ট্রেনেরই আরেক যাত্রী নাগাস্বামী শেট্টি (৭৬) চিককামাগালুরুর কালাসারই বাসিন্দা। তাঁরও গন্তব্য ছিল ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত জৈন সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র স্থান সামেদ শিখরজি। শেট্টির কথায়, 'আমি ট্রেনের এস৫ কোচে ছিলাম। আমরা প্রার্থনা করছিলাম এবং তখনই একটা ঝাঁকুনি হল। তাতেই আমরা সবাই আমাদের চেয়ার থেকে পড়ে যাই। আমাদের বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ট্রেনটি থামার আগে ততক্ষণে আরও এক কিলোমিটার এগিয়ে গিয়েছে। পরে, আমরা জানতে পারি যে কয়েকটি কোচ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, দুর্ঘটনা ঘটেছে।'

শেট্টি এবং কালাসার অন্যান্য তীর্থযাত্রীরা ৩১ মে শহর ছেড়েছিলেন এবং ১ জুন বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। তাঁর কথায়, 'আমাদের ট্রেনটির রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়বার কথা থাকলেও তা দুই ঘন্টা দেরিতে ছেড়েছিল। দুর্ঘটনার পর একটি ডিজেল ইঞ্জিন এসে বাকি কোচগুলোকে অন্য প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যায়। এখন, আমরা কলকাতায় যাচ্ছি এবং আমরা ভাগ্যবান যে বেঁচে আছি।'

বিহারের বাসিন্দা শেখর চেন্নাইতে কর্মরত ছিলেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। শুক্রবারের দুর্ঘটনায় তিনি সামান্য আহত হয়েছেন। একটি ইঞ্জিনের সাহায্যে বেঙ্গালুরু-হাওড়া ট্রেনের বাকি কোচগুলি কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। শেখর বলছিলেন, 'ওই বিভৎস দুর্ঘটনার পর আমি বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছি। কোনওক্রমে ট্রেন থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। ট্রেনের আধিকারিকরাই আমাকে হাওড়া মুখী বেঙ্গালুরু সুপারফাস্টের কামরায় তুলে দেন।'

odisha Balasore coromandel express accident
Advertisment