উত্তর-পশ্চিম দিল্লির সরু ঘুপচি এক গলি। নরেলাকে শহরতলিই বলা চলে। সেখানকার এক ক্লিনিকে রয়েছে স্তন স্থাপন বা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের ব্যবস্থা। অর্থাৎ কি না কৃত্রিম উপায়ে শরীরে স্তন বসানো। ক্লিনিকে রয়েছে অপারেশন থিয়েটর এবং রোগীর জন্য পেশেন্ট ওয়ার্ড। এক একটা অস্ত্রোপচারে লাগছে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা। ক্লিনিকের নাম কে ডি প্লাস্টিক সার্জারি সেন্টার।
কে ডি প্লাস্টিক সার্জারি সেন্টারের ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরেক ব্যস্ত ক্লিনিক ওলমেক প্লাস্টিক সার্জারি সেন্টার। দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আবাসনে বসেছে ক্লিনিক। ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট সার্জারির জন্য অ্যাপয়েনমেন্ট করলে দু'মাস পর আপনার ডাক আসবে, এতটাই ব্যস্ত সেই ক্লিনিক। দুই ক্লিনিকের মধ্যে একটা ব্যাপারে মিল রয়েছে। ওলমেক থেকে কাজ শিখে এখানকার টেকনিশিয়ান খুলেছেন নিজের আলাদা ক্লিনিক, যার নাম কে ডি প্লাস্টিক সার্জারি সেন্টার। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে টেকনিশিয়ানের চিকিৎসাগত যোগ্যতা কী? সুনিশ্চিত কোনও উত্তর এখানে পাবেন না।
ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট ভারতে একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। যত গভীরে যাবেন, চমকে উঠবেন ততই। অস্ত্রোপচারের সময় মেনে চলা হয় না কোনও সুরক্ষা বিধি। রেগুলেটর যাচাই করা হয় না দেশের কোথাও। অধিকাংশ সময়ে টেকনিশিয়ানরা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন সার্জন হিসেবে, এবং অস্ত্রোপচার করছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, লজ্জা এবং সামাজিক বিধিনিষেধের জন্য রোগী সব দেখে শুনে, সহ্য করেও অভিযোগ জানাতে পারছেনা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এবং ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) যৌথ ভাবে সামনে এনেছে সমাজের এই অন্ধকার দিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাঁটু প্রতিস্থাপন, পেসমেকার, ব্রেস্ট ইমপ্লান্টের ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। একটি ভিডিও রেকর্ডিং-এর মাধ্যমে সাংবাদিকরা সামনে এনেছেন কী ভাবে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্র দিয়ে চিকিৎসা হয়ে থাকে দেশে।
আদর্শগত ভাবে, বাইরে থেকে কোনও যন্ত্র অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রবেশ করানোর আগে তার পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন। কিন্তু দেশের হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তার অর্ধেকের বেশি সেকেন্ড হ্যান্ড যন্ত্রপাতি। অর্থাৎ অন্য কোনো সংস্থা বা হাসপাতালে আগে ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে। অথবা রোগী হাসপাতালে যখন ভর্তি হচ্ছেন, তার আগে থেকেই যন্ত্রটি হাসপাতালে রয়েছে। যন্ত্রটি শরীরের ভেতর যাওয়া আদৌ নিরাপদ কি না, যাচাই করে দেখার কোনও জায়গাই নেই। এবং বেশির ভাগ রোগীকে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে, প্রথম বার সফল না হওয়ার জন্য।
এই প্রসঙ্গে পিতমপুরা ক্লিনিকের এক চিকিৎসক ডঃ কৌশিক জানিয়েছেন, তিনি মাসে ১০ থেকে ১৫টি স্তন স্থাপনের জন্য সার্জারি করান, অধিকাংশই রূপান্তরকামীদের। ডঃ কৌশিক বলছেন, "রিভিশন সার্জারি অধিকাংশ ক্ষেত্রে করানোর অন্যতম কারণ হিসেবে যন্ত্রপাতির সমস্যার কথা ভাবেন অনেকেই। কিন্তু আসল কারণ হল নির্দিষ্ট যোগ্যতাহীন লোকজনের কাছে প্রথমবার অস্ত্রোপচার করানো"।