পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। ফলাফল অনুসারে দেখা গিয়েছে ইমরান খানের দল পিটিআই সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে নওয়াজ শরিফের মাথায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে বলেই ধারণা ওয়াকিবহলমহলের। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে জয়ী হলেও ইমরান খান ও তার দলের ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনও অনিশ্চিত। নওয়াজ শরিফ ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দলগুলোর মধ্যে জোট সরকার গঠনের জন্য আলোচনা চলছে। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে রাজপথে বিক্ষোভ করছে পিটিআই। নির্বাচনের ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে পাকিস্তানে আবারও সেনাবাহিনী 'কিংমেকার' হয়ে উঠবে এবং পর্দার আড়ালে সরকার চালাবে সেদেশের সেনাবাহিনী।
ইমরান খান কারাবন্দী এবং তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আগে পিটিআইয়ের নির্বাচনী প্রতীকও কেড়ে নেয়। যার কারণে পিটিআই নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে এত কিছুর পরও পাকিস্তানের জনগণ ইমরান খানকে সমর্থন করেছে। একজন স্বতন্ত্র নেতা হিসেবে, ইমরান খানের দল সর্বাধিক ১০১ টি আসন জিতেছে। যেখানে নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ৭৫ টি আসন এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি ৫৪ টি আসন জিতেছে। পাকিস্তানে ২৬৫ টি বিধানসভা আসনের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে সরকার গড়তে ম্যাজিক ফিগার ১৩৩। কিন্তু কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।
নির্বাচনের ফলাফলের পর নওয়াজ শরিফের দল ও বিলাওয়াল ভুট্টোর দলের মধ্যে জোটের বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইমরান খান এবং তার দলকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না এবং এই কারণেই নওয়াজ শরিফ এবং বিলাওয়াল ভুট্টোর মধ্যে একটি জোটের বিষয়ে মিলবে সমাধানসূত্র। অন্যান্য দলের নেতারাও এই জোট সরকারে অংশ নিতে পারেন বলেই রিপোর্ট। সরকার গঠন করতে নেতৃত্ব দিতে পারেন নওয়াজ শরীফ ।
পিটিআই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে রাজপথে নামার ঘোষণা করেছে। কিন্তু তাতে খুব একটা প্রভাব পড়ছে না এবং সেনাবাহিনীর ভয়ে বিক্ষিপ্তভাবেই মানুষজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। পাকিস্তানের নির্বাচনে কারচুপির মামলা এখন আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে। বিপুল সংখ্যক পরাজিত প্রার্থী ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। পিটিআই দাবি করেছে যে তার সমর্থিত প্রার্থীরা সর্বাধিক সংখ্যক আসন জিতেছে, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বঞ্চিত করার জন্য ফলাফলে কারচুপি করা হয়েছে। এ কারণে ইমরান সমর্থিত প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ডন সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ফলাফলের বিরুদ্ধে যারা চ্যালেঞ্জ দাখিল করছেন তাদের বেশিরভাগই পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী।
পাক মিডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে জানা গিয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতারা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং মুত্তাহিদা কামি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের জন্য ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। রিপোর্ট অনুসারে বলা হয়েছে পিএমএল-এন প্রধানমন্ত্রীর পদ নেবে এবং জোটের বিষয়ে সম্মত হলে রাষ্ট্রপতি ও স্পিকারের পদগুলি জোটের অন্যান্য দলের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে। পাক সংবাদ পত্র ডন জানিয়েছে, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর খান নওয়াজ শরিফ এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সঙ্গে কোনরমকের জোটের সম্ভাবনাকে খারিজ করে দিয়েছে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কারুর সঙ্গে সরকার গঠনের বিষয়ে কোন আলোচনা হবে না। তাদের সঙ্গে সরকার গড়াড় চেয়ে বিরোধী দলে বসা ভালো, কিন্তু আমরা মনে করি আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে,” তাই সরকার গঠনে আমাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত"।