বান্ধবী খুনে ফের পুলিশের সামনে নয়া তথ্য। ২০২০ সালে কাঁধ ও পিঠে গুরুতর চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল শ্রদ্ধাকে। তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। ডাঃ শিব প্রসাদ শিন্দে সেই সময় যিনি শ্রদ্ধার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন তিনি জানিয়েছেন, পিঠে এবং কাঁধে গুরুতর চোটের কারণেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শ্রদ্ধাকে। সঙ্গে ছিলেন প্রেমিক আফতাব। তিনিই শ্রদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
চার দিন ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শ্রদ্ধা। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর সঙ্গে কথা বলার সময় শ্রদ্ধার এক বন্ধু রাহুল রাই দাবি করেন যে আফতাব শ্রদ্ধাকে প্রায়ই মারধর করত, এমনকি সেই কারণে তাকে একবার হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়। পাশাপাশি শ্রদ্ধা তার বন্ধুদের কাছে আফতাবের মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথাও বারে বারে তুলে ধরেন।
পুলিশ তদন্তে জেনেছে ১৮ মে দুজনের মধ্যে প্রবল বচসার জেরেই খুন হতে হয় দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে ১৮ মে প্রথম নয়, আফতাব এবং শ্রদ্ধার মধ্যে ঝগড়া-হাতাহাতি প্রায় তিন বছর ধরে চলছিল। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে যে অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা তার লিভ-ইন পার্টনার শ্রদ্ধার পরিচয় গোপন করতে তাকে খুনের পর তার মুখ পুড়িয়ে দেয়। সে প্রথমে শ্রদ্ধার দেহকে ৩৫ টুকরো করে এবং তারপর তার মুখ পুড়িয়ে দেয় যাতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া গেলেও শ্রদ্ধাকে শনাক্ত করা না যায়। পাশাপাশি তদন্তে পুলিশ জেনেছে খুনের সময় আফতাব গাঁজার নেশায় বিভোর ছিলেন।
লিভ-ইন পার্টনারকে নৃশংস ভাবে খুনের পর তাঁর দেহ ফ্রিজে পুরে রেখেছিল আফতাব পুনাওয়ালা। এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরও দক্ষিণ দিল্লির মেহেরৌলির ফ্ল্যাটে আরেক মহিলাকে নিয়ে এসেছিল আফতাব। দিল্লির নৃশংস কাণ্ডের তদন্তে নেমে চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য পেল পুলিশ। স্ত্রী’র পরিচয় দিয়েই ফ্ল্যাটভাড়া করে আফতাব। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে মাঝে মধ্যেই চলত পার্টি। একাধিক মহিলার যাতায়াত ছিল সেই ফ্ল্যাটে।
শ্রদ্ধাকে খুনের পর বাম্বল নামে একটি ডেটিং অ্যাপে এক মনোবিদের প্রেমে পড়ে আফতাব। তার আগে এই অ্যাপেই ২০১৯ সালে শ্রদ্ধার সংস্পর্শে আসে সে। সূত্রের খবর, জুন-জুলাই মাসে একাধিকবার আফতাবের ফ্ল্যাটে আসেন সেই মহিলা। তখন শ্রদ্ধার দেহাংশ বাড়িতেই ফ্রিজে রাখা ছিল। তদন্তকারী গোয়েন্দাদের মতে, গত ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করা হয়। এর পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে বন্ধুদের মেসেজ করে আফতাব। যাতে শ্রদ্ধার বন্ধুদের কোনও সন্দেহ না হয়। শ্রদ্ধার ক্রেডিট কার্ডের বিলও মিটিয়ে দেয় যাতে সংস্থাগুলি শ্রদ্ধার মুম্বইয়ের ঠিকানায় যোগাযোগ না করে। ২০১৯ সালে নাইগাঁও (পূর্ব)তে এক কামরায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া দুজনেই নিজেদের বিবাহিত বলে দাবি করে। আফতাব পুনাওয়ালার নামে ভাড়ার চুক্তি হয়। পরে অতমারী পরিস্থিতিতে দুজনেই সেই ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
তদন্তে নেমে উঠে আসে আরও এক ভয়ঙ্কর তথ্য। মহারাষ্ট্রের ভাসাইতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে শুরু করে আফতাব-শ্রদ্ধা! সেসময় শ্রদ্ধাকে নিজের স্ত্রী’র পরিচয় দেয় আফতাব। শ্রদ্ধা ও আফতাবের পরিচয় একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে। শ্রদ্ধার বাবা-মা প্রথম থেকে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন, এরপর তারা দুজনেই বাড়ি ছেড়ে একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। তিন বছর একসঙ্গে থাকাকালীন ভাসাই এলাকাতেই একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: < জু ফেস্টিভ্যালেই ‘উৎসবের’ প্রস্তুতি, শীতে রেকর্ড ভিড়ের আশা, বুক বাঁধছে আলিপুর চিড়িয়াখানা >
২০২০- থেকেই মহারাষ্ট্রের ভাসাইতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে শুরু করে আফতাব-শ্রদ্ধা! ফ্ল্যাটের মালিকের দেওয়া বয়ান অনুসারে পুলিশ জানতে পেরেছে শ্রদ্ধাকে নিজের স্ত্রী হিসাবেই পরিচয় দেন আফতাব। তিনি তার আধার কার্ড এবং অন্যান্য নথিও ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার সময় নিয়ম মেনে জমাও দেন। ফ্ল্যাটের মালিক আরও বলেন, দুজনেই সময়মতো ফ্ল্যাটের ভাড়া ও অন্যান্য বিল মিটিয়ে দিতেন। শ্রদ্ধা এখানে একটি স্পোর্টস রিটেইল স্টোরে নতুন একটি কাজে যোগ দেন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, দুজনেই ভাসাইয়ের ফ্ল্যাট ছেড়ে মার্চে দিল্লিতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। হত্যার প্রাথমিক পরিকল্পনা হিসাবে আফতাব মুম্বাই থেকে দিল্লি গিয়ে থাকতে পারে এমনটাই মনে করছেন দুঁদে পুলিশ আধিকারিকরা। পুলিশ জানিয়েছে, ভাসাইয়ে শেষ যে ফ্ল্যাটটি তিনি ভাড়া নিয়েছিলেন তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত আগস্টে। আফতাব কবে সেই ফ্ল্যাট থেকে অন্যত্র শিফট করে তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। উল্লেখ্য, শ্রদ্ধা ওয়াকার খুনের ঘটনায় আফতাব পুনাওয়ালাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।