ফেসবুক থেকে পরিচয়-প্রেম। তা থেকেই পরিণয়। সোমবার অসমের গোলাঘাটে ২৪ বছর বয়সী এক যুবতী ও তার বাবা-মাকে খুন করে সেই প্রেমিকই। পুলিশ জানিয়েছে যে সোমবার, নজিবুর রহমান বোরা, তার নয় মাসের শিশুকে নিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করে এবং স্ত্রী সংঘমিত্রা ঘোষ এবং তার বাবা-মা সঞ্জীব এবং জুনু ঘোষকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে সে।
এরপরই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শুক্রবার গোলাঘাটে সংঘমিত্রার ছোট বোন অঙ্কিতার সঙ্গে দেখা করেন। তোলেন লাভ জিহাদের তত্ত্বও। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় নাজিবুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং শিশুকে শিশু কল্যাণ কমিটির সুরক্ষায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, নাজিবুর, সংঘমিত্রা এবং তার বাবা-মা একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এর আগে দায়ের করেছিলেন।
পুলিশ সুপার পুশকিন জৈন জানিয়েছেন, “তাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ লেগেই থাকত। একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা পালটা মামলা দায়ের করেছিলেন। সন্তানকে নিয়েও স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে বিরোধ ছিল। অপরাধের দিন, দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল তর্কযুদ্ধের পরে, একটি ধারালো বস্তু দিয়ে তাদের আক্রমণ মহিলার প্রেমিক তথা বর্তমান স্বামী।
২০২০ সালের জুন মাসে ফেসবুকে দুজনের আলাপ। কলকাতায় এসে তারা বিয়েও সারেন। ইতিমধ্যেই সেই বছরের অক্টোবরে সংঘমিত্রার বাবা-মা তার বিরুদ্ধে আইপিসির ৩৬৬ ধারার অধীনে গোলাঘাট থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। জোর করে মেয়েকে বিয়েতে বাধ্য করা এবং অপহরণের মামলা দায়ের করা হয় যুবকের বিরুদ্ধে।
চার মাস পরে, মেয়েটির বাবা-মা তার বিরুদ্ধে চুরির জন্য একটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন, যার কারণে তাকে গ্রেফতারও করা হয় এবং ৩৭ দিনের জন্য তাকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়েছিল।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে, দম্পতি চেন্নাই চলে যান এবং সেখানে পাঁচ মাস একসঙ্গে করেন, পুলিশ জানিয়েছে। আগস্টে যখন তারা গোলাঘাটে ফিরে আসেন, তখন থেকে মহিলা তার স্বামীর বাড়িতে থাকতে শুরু করে এবং নভেম্বরে তাদের একটি সন্তান হয়।
চার মাস পরে, নজিবুরের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। এবার তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। সংঘমিত্রা চলতি বছরের মার্চ মাসে তার নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন, অভিযোগ করেন যে তিনি স্বামীর দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছেন এবং এই বিষয়ে গোলাঘাট থানায় আরেকটি এফআইআর দায়ের করা হয়। ফলস্বরূপ, ফের ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। ২৮ দিনের জন্য জেলে ঠাই হয় যুবকের। তিনি জামিনে মুক্তি পেলে, সংঘমিত্রার এবং নাজিবুরের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততা নেমে আসে সন্তানের কারণে। নাজিবুরের ভাই সংঘমিত্রা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নাজিবুরকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে। ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় পুলিশ এই চূড়ান্ত বিরোধেকেই দায়ি করছেন।
এদিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেন, নাজিবুর হিন্দু নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে সংঘমিত্রার সঙ্গে আলাপ জমান। তিনি মহিলাদের ভিন ধর্মের ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে করার আগে "অনেকবার চিন্তা করার" আবেদন করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের রাজ্যের তরুণীদের কাছে আবেদন জানাই, ফেসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজে পুরুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন না এবং এক ধর্মের মানুষকে ভিন ধর্মে বিয়ে করার বিষয়ে ভাবনা চিন্তারও নিদান দেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “যখন আমরা লাভ জিহাদের কথা বলি, তখন অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন লাভ জিহাদ কোথায়? কিন্তু গোলাঘাট শহরের এই ঘটনা ‘লাভ জিহাদের’একটি বাস্তব উদাহরণ। কেরালা স্টোরি সিনেমার গল্পটি মিথ্যা নয়,”।