ডিজিটাল ইন্ডিয়া বিল আনতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার, খসড়াটি শীঘ্রই জনসাধারণের পরামর্শের জন্য প্রকাশ করা হবে। নতুন আইন প্রসঙ্গে সাইবার ও আইটি আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এটা সাইবার অপরাধের স্বর্ণযুগ, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল ম্যালওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করা। সূত্রের খবর, "ডিজিটাল ইন্ডিয়া বিলের বিধান লঙ্ঘনের জন্য ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান থাকতে পারে।"পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে, উদীয়মান প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিলে বিধান আনার সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশে ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ দমন এবং ইন্টারনেট ও আইটি সেক্টরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরি করা "ডিজিটাল ইন্ডিয়া বিল" এর খসড়া শীঘ্রই জনসাধারণের পরামর্শের জন্য সামনে আনা হবে। এই নতুন বিলটি ২৩ বছরের পুরনো "তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০০" কে প্রতিস্থাপন করবে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর মতে, সরকার প্রস্তাবিত "ডিজিটাল ইন্ডিয়া বিল" এর বিধান লঙ্ঘনের জন্য দোষী প্রতিষ্ঠানকে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান বিলটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল ইন্ডিয়া অথরিটি সিদ্ধান্ত নেবে জরিমানার পরিমাণ।
নতুন আইনে উন্মুক্ত ইন্টারনেট ও অনলাইন নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে
সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত বিলে ডিজিটাল নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত ইন্টারনেট এবং অনলাইন নিরাপত্তার ওপর জোর দেওয়া হবে। ২০০০ সালে যখন তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণীত হয়, তখন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ। আজ তাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ কোটিরও বেশি। গত ২৩ বছরে, ই-কমার্স, ডিজিটাল মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া, এআই, ওটিটি এবং গেমিংয়ের মতো নিত্যনতুন অ্যাপের আবির্ভাব হয়েছে। এগুলিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তাবিত বিলে নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
নতুন আইনে সাইবার ক্রাইম, সাইবার সিকিউরিটি এবং হ্যাকিং ছাড়াও ক্যাটফিশিং, ডক্সিং, সাইবার স্ট্যাকিং, সাইবার ট্রোলিং, ফিশিং ইত্যাদি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত বিলে কঠোর নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাবিত বিলে শিশুদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে গেমিং এবং বেটিং অ্যাপের বিষয়েও কঠোর নিয়ম বলবৎ থাকবে।
দেশে ক্রমাগত বাড়ছে সাইবার অপরাধ
এই প্রস্তাবিত আইনের খসড়া এমন সময়ে তৈরি করা হয়েছে যখন দেশে সাইবার অপরাধের ঘটনা বাড়ছে প্রতিদিন। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর গত মাসে ৯ আগস্ট সংসদে দেওয়া একটি লিখিত উত্তরে বলেছিলেন যে ২০১৯ সালে দেশে ৪৪,৭৩৫ টি সাইবার অপরাধের মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। ২০২০ সালে সাইবার অপরাধের মামলা বেড়ে ৫০,০৩৫ টি হয়েছে। এক বছর পর ২০২১ সালে, এটি আরও বেড়ে ৫২, ৯৭৪-এ দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ভারতকে এক ট্রিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল অর্থনীতিতে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই বিল তৈরি করা হচ্ছে।
কী বললেন আইটি আইন বিশেষজ্ঞরা
নতুন আইন প্রসঙ্গে সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা সাইবার অপরাধের সোনালী যুগ, আমাদের কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। বর্তমান আইটি আইনে দুই-তিনটি সাইবার অপরাধ ছাড়া সব সাইবার অপরাধকে জামিনযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে। ভারতে, সাইবার অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার অনুপাত ১% এর কম। কারণ এটি প্রসিকিউশনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
সরকার চাইছে প্রয়োজনীয় বা সমীচীন ক্ষেত্রে যাবতীয় রীতিনীতি ভেঙে তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। আর, এই জাতীয় আদেশ জারি করার পরিধি আরও প্রসারিত করতে। এই ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ আধিকারিক জানিয়েছেন, খসড়া আইনটি এখনও চূড়ান্ত নয়। আলোচনার স্তরে আছে। সরকারিভাবে ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি মন্ত্রক অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বেশ রাখঢাক বজায় রেখেছে। কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলেও উত্তর দেয়নি। যাই হোক, পরিসংখ্যান বলছে যে অনলাইন বিষয়বস্তুর ওপর সেন্সরশিপের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, সামাজিক মাধ্যমগুলোর ওপর সরকারের জারি করা বিষয়বস্তু-ব্লক করার নির্দেশের সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় ২,০০০ শতাংশ বেড়েছে।