এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রিতঙ্কর দিওয়াকার মঙ্গলবার বলেছেন, “২০১৮ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে কলেজিয়ামের সুপারিশে ছত্তিশগড় হাইকোর্ট থেকে তাঁর বদলির আদেশ "তাঁকে হয়রানি করার একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে" জারি করা হয়েছিল।
প্রয়াগরাজে তাঁর বিদায়ী অনুষ্ঠানে তাঁর এই মন্তব্যের একদিন পরেই অন্য এক বিচারপতি, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী, যাকে পাটনা হাইকোর্টে বদলি করা হয়েছিল। তাঁর বিদায়ী ভাষণে বলেছিলেন, “আমি অবশ্যই বলব যে ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময়, বিশেষ নেওয়া এক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন হাইকোর্টের ১৬ জন বিচারপতিদের বদলি করা হয়। প্রায় ৪৮ বছর পর, মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম একযোগে ২৪ জন বিচারপতিকে এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে বদলি করেছে।”
কর্মজীবনের শেষ দিনে, বিচারপতি দিওয়াকার বলেছিলেন যে, তিনি ৩১ শে মার্চ ২০০৯ -এ ছত্তিশগড় হাইকোর্টে একজন বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমি সকলের সন্তুষ্টির জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ছত্তিশগড় হাইকোর্টে বিচারপতি হিসাবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং বিশেষ করে আমার নিজের অভ্যন্তরীণ সত্তার সন্তুষ্টির জন্য,”।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র অজানা কারণে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আমার বদলিকে বাধ্য করেছিলেন যেখানে আমি ৩ অক্টোবর, ২০১৮- এ যোগ দিই। আমার বদলির আদেশ আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে জারি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে,”।
বিচারপতি দিওয়াকার কর্মজীবনের কথা স্মরণ করে বলেন, "তবে, ভাগ্যের দিক থেকে এটি আমার জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়েছিল কারণ আমি আমার সহবিচারপতিদের পাশাপাশি বারের সদস্যদের কাছ থেকে অপরিমেয় সমর্থন এবং সহযোগিতা পেয়েছি"। তিনি আরও বলেন, “আমি বর্তমান প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যিনি আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় সংশোধন করেছেন।" বিচারপতি দিওয়াকারের কথায়, " এটি আমার কাছে সর্বদা একটি গর্বের বিষয়" আমি "এই মহান প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি"।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, “কাজের চাপের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা সত্যিই এলাহাবাদ হাইকোর্টের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তদুপরি, এই আদালতের কার্যকারিতা সম্পর্কিত বিভিন্ন কোণ থেকে সমালোচনার শিকার হয়েছিল। তবে আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি যে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে, সমালোচকদের অবশ্যই ভিতরে থেকে প্রতিষ্ঠানের অসুবিধা এবং ত্রুটিগুলি দেখতে হবে "।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে তার বিদায়ী ভাষণে বিচারপতি চৌধুরী তার বদলির প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, "আমি পরিবর্তনের সূচনাকারীদের একজন, নির্বাহী বিভাগের হাত থেকে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ আসনের হাতে ক্ষমতার স্থানান্তর।" জাস্টিস চৌধুরী বলেন, “ভারত সরকার, ২৮ জানুয়ারি ১৯৮৩ -এ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা নীতিতে বলেছিল, যে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা রাজ্যের বাইরে থেকে নিযুক্ত হবেন এবং হাইকোর্টের এক তৃতীয়াংশ বিচারপতিকে অবশ্যই বাইরের রাজ্যের হতে হবে। আমি মনে করি যে আমাদের বদলির মাধ্যমে নীতির প্রবর্তন এবং বাস্তবায়নের সূচনা হয়েছিল”। তাঁর বিদায়ী ভাষণে জাস্টিস চৌধুরী বলেন, “আমি বারের সদস্যদের কাছ থেকে অত্যন্ত সম্মান, ভালবাসা এবং স্নেহ পেয়েছি এবং তাই সকলকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য আমি দুঃখিত। যাইহোক, কলেজিয়ামের ইচ্ছাই আমাকে আপনাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।”
বিচারপতি চৌধুরীর কথায়, "আমি জানি যে সংবিধানে ২২২ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিধান রয়েছে যে একজন বিচারপতিকে বদলি হতেই হবে। তাই, আমি কোনো অনুশোচনা ছাড়াই বদলির বিষয়টি গ্রহণ করি,”। "কিন্তু একই সঙ্গে আমি বিনয়ের সঙ্গে অবশ্যই বলতে চাই সংবিধানে ২২২ অনুচ্ছেদের অধীনে যে বিধান রয়েছে তা খুব সংযতভাবে বিবেচনা করা উচিত।" বিচারপতি চৌধুরী ১২ অক্টোবর, ২০১৮ এ অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে কলকাতা হাইকোর্টে যোগদান করেন। তিনি ৪ এপ্রিল ২০২০- এ আদালতের স্থায়ী বিচারপতির পদ গ্রহণ করেন।