Advertisment

গোটাবায়া পালিয়েছেন, তাঁর প্রাসাদ এখন আম জনতার চারণভূমি

বাড়ির পিছনের দিকের সুইমিং পুল বিক্ষোভকারীদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sri Lanka, Sri Lanka political crisis, Sri Lanka crisis, Express in Sri Lanka, Sri Lankan President, Gotabaya Rajapaksa, Sri Lankan Prime Minister, Ranil Wickremesinghe

গোটাবায়া পালিয়েছেন, তাঁর প্রাসাদ এখন আম জনতার চারণভূমি

দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট! অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দ্বীপরাষ্ট্রে। সরকার বিরোধী বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। দিন কয়েক আগেই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। তার আগেই প্রাসাদ ছেড়ে সপরিবারে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষ। জ্বালিয়েও দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। গতকাল গভীর রাত্রে প্রেসিডেন্টের দেশ ছাড়ার খবর বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। 

Advertisment

প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষের বিলাসবহুল প্রাসাদে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস যখন প্রবেশ করল তখন চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিক্ষোভকারীরা। কেউ বসে রয়েছে বিলাসবহুল খাটে, কেউ বা লিভিং রুমে। কেউ আবার ওয়াই ফাইয়ের সন্ধানে মোবাইল স্ক্রোল করে চলেছেন। প্রতিটি রুমে বাতানুকূল যন্ত্র! বিলাসিতার চাদরে মোড়ানো এক প্রাসাদ কক্ষ। পুরুষ, মহিলা, শিশুরা ভিড় করে রয়েছে প্রাসাদের ভিতর।

ইরোশ আলফোনসো, বছর ২৬ এর এক ইতিহাসের ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল  ডাচরা এই বিল্ডিংগুলি তৈরি করেছিল এবং তারপরে ব্রিটিশরা সেগুলি ভোগ করে।  স্বাধীনতার ৭৪ বছরেও এদেশের মানুষ এসব সুবিধা কিছুই ভোগ করতে পারেনি। শুধুমাত্র বাছাই করা কয়েকজন এই সুযোগ-সুবিধাগুলো উপভোগ করেছেন এবং করে চলেছেন। এখন সময় এসেছে পরিবর্তনের। আমরা চাই এবার সাধারণ মানুষও এই সুযোগ সুবিধা ভোগ করুক”।

তিনি আরও বলেন, “বিক্ষোভে যারা সামিল হয়েছেন তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে না, বরং এগুলিকে রক্ষা করতে তৎপর”। বিক্ষোভের প্রথম দিনে অবশ্য বেশ কিছু জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে সেগুলিকে কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য বললেন,  বহুজাতিক সংস্থার কর্মী রাজিথা উদাওয়ালা।

আরেকটু এগোতেই দেখা গেল, রান্নাঘর সম্পূর্ণভাবে ভাংচুর করা হয়েছে - সেখানে একটি ফ্রিজের দরজা খোলা। ব্যবহৃত প্লেট, টিস্যু, জ্যামের খোলা জার, ডিটারজেন্ট পাউডার চারপাশে পড়ে আছে। এমনকী টোস্টারও ব্যবহার করা হয়েছে। বাড়ির পিছনের দিকের সুইমিং পুল বিক্ষোভকারীদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

এখানকার ভিডিওই দিন কয়েক আগে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা গিয়েছে বিলাসিতার চাদর মেখে পুলের ঠাণ্ডা জলে স্নান করতে ব্যস্ত লঙ্কাবাসী । পুলের চারপাশে উৎসাহী চোখের ভিড়। কেউ কেউ সেলফি স্টিক নিয়ে ফটো তুলতে ব্যস্ত। নাদিশা নামের এক বিক্ষোভকারী জানালেন, “ মানুষের কাছে খাবার, জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ নেই… নেতারা এইভাবে সুবিধা ভোগ করছিল!  তারা ভুল উপায়ে অর্থ উপার্জন করছিল। এই জায়গাটিকে একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ করা উচিত।”

Sri Lanka, Sri Lanka political crisis, Sri Lanka crisis, Express in Sri Lanka, Sri Lankan President, Gotabaya Rajapaksa, Sri Lankan Prime Minister, Ranil Wickremesinghe
ফাঁকা প্রাসাদের দখল নিয়েছেন সাধারণ মানুষ

সেই সঙ্গে তিনি বললেন “তাদের কাছে টিয়ার গ্যাস এবং বন্দুকের জন্য টাকা আছে, বাচ্চাদের দুধ এবং ওষুধের জন্য কিছুই নেই"

শ্রীলঙ্কার বহু প্রদেশেই জারি করা হয়েছে কারফিউ। প্রেসিডেন্টের দেশ ছাড়ার খবর কাতারে কাতারে বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমসিঙ্ঘের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বিক্ষোভ প্রশমিত করতে জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে। পশ্চিম শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। এদিকে দেশের  অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

লিটার পেট্রোলের দাম ৩ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। রান্নার গ্যাস বিকোচ্ছে সিলিন্ডার প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দরে।  প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্টের যাবতীয় কাজকর্ম চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষ এই মুহূর্তে আশ্রয় নিয়েছেন মালদ্বীপে। সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে উড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। গত কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকট তীব্রতর হয়েছে। মিলছে না জ্বালানি। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। এমন অবস্থায় জনরোষ এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাতে করে বিক্ষোভ আরও মারাত্মক আকার নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেও বিক্ষোভকারীদের লাগাতার হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। আগামী ২০ জুলাই নয়া শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে বলে বুধবার জানিয়েছেন সে দেশের পার্লামেন্টের স্পিকার য়ুপা অবেবর্ধনে। রাজধানী কলম্বো-সহ পশ্চিম শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাদের দাবি রাজাপক্ষেকে দেশে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। শ্রীলঙ্কান বিমান বাহিনী সূত্রে খবর যে তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদনের পরে মালদ্বীপে যাওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের জন্য একটি বিমানের ব্যবস্থা করেছে।

আরও পড়ুন: <লঙ্কা সংকট: ভারতের ব্যবসায় বড় ধাক্কা, বন্ধ কৃষিজাত পণ্যের রফতানি!>

সেদেশের মিডিয়ার দাবি বিমানে উড়ে মালদ্বীপ যাওরা সময় বিমানে থাকা চার যাত্রীর মধ্যে ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে, তাঁর স্ত্রী এবং তাদের দুই দেহরক্ষী। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগেরও দাবি জানিয়েছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া "মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার” গেহান মেলরয়, সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন “দেশের জনগণ প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের দাবি করছে আমরা চাই সম্পূর্ণ নতুন এক সরকার”।

Srilanka Gotabaya Rajapaksa
Advertisment