কু-ঝিক-ঝিক-ঝিক-ঝিক-ঝিক-ঝিক। আকাশের মুখে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে একটা গোঁ গোঁ শব্দে ট্রেনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ইঞ্জিনটা। নিকষ কালো চেহারার সেই ইঞ্জিনের ছবি অতীতের বাংলা থেকে হিন্দি চলচ্চিত্রে বহুবার দর্শকরা দেখেছেন। বাস্তবে অবশ্য সেই ইঞ্জিন এখন শুধু রেলের মিউজিয়ামেই দেখা যায়।
হ্যাঁ, যদি কোনও রেলস্টেশনে মডেল বানিয়ে রাখে, তবেও দেখা মেলে। পথহারা সেই বাষ্পচালিত ইঞ্জিনকেই ফের তার পথে ফেরাল পঁচাত্তুরে স্বাধীনতার বর্ষপূর্তি। অমৃত মহোৎসবে ঐতিহ্যচারণ এবছর এভাবেই করতে চলেছে ভারতীয় রেল। ১৬৭ বছরের পুরোনো ইঞ্জিনকে স্বল্পসময়ের জন্য হলেও রেলপথ ফিরিয়ে দিয়ে।
উদ্যোগটা মূলত দক্ষিণ রেলওয়ের। চেন্নাইয়ের এগমোর থেকে কদমবাক্কাম পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসে গড়াবে এই ইঞ্জিনের চাকা। রেলের ওই ডিভিশনের ম্যানেজার এক টুইটে দেশবাসীকে সুখবরটা দিয়েছেন। দেশের প্রাচীনতম এই বাষ্পচালিত ইঞ্জিন 'EIR-21' বেলা ১২টায় বুঝিয়ে দেবে বয়সটাই শুধু বেড়েছে। আজও সে আগের মতই সতেজ।
খুশি রেলকর্তারা। তাঁরাও এক মহাসন্ধিক্ষণের সাক্ষী থাকার প্রত্যাশায় প্রহর গুণছেন। ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার টুইট করেছেন, 'দেশের প্রাচীনতম বাষ্পচালিত ইঞ্জিন 'EIR-21', ১৮৫৫ সালে তৈরি হয়েছে। এই ইঞ্জিন ১৮৬৬ সালে হাওড়া থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রথম ট্রেন নিয়ে গিয়েছিল। পেরাম্বুরের রেলইঞ্জিন মেরামতির কারখানা এর রক্ষণাবেক্ষণ করে।'
আরও পড়ুন- ভারত বিশ্বকে গণতন্ত্রের গুরুত্ব শিখিয়েছে, জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে জানালেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
সিপাহি বিদ্রোহের ২ বছর আগে, ১৮৫৫ সালে কিটসন, থম্পসন এবং হিউইটসন ইংল্যান্ডে তৈরি করেছিল 'EIR-21'। সেই বছরই ব্রিটিশ ভারতে পাঠানো হয়েছিল এই বাষ্পচালিত ইঞ্জিন। ১১ বছর পর, ১৮৬৬ সালে তা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে দিল্লিতে প্রথম ট্রেন নিয়ে গিয়েছিল। তবে, সেই সময় যে কোচগুলোকে সে টানত সেই সব কোচ আজ বদলে গিয়েছে অনেকটাই। তার ওজনের তারতম্যও ঘটেছে। কিন্তু, তাতে কী রেলকর্মীদের রক্ষণাবেক্ষণ এতটাই নিখুঁত যে ১৬৭ বছর আগেকার ছবিও অনায়াসে মনে করিয়ে দিতে পারবে 'EIR-21,' এমনটাই বিশ্বাস রেলকর্তাদের।
এই ইঞ্জিন ভারতের দীর্ঘ ইতিহাসের সাক্ষী। দেখেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল। ব্রিটিশ ভারতের জমানা। দীর্ঘসময় হাওড়া আর রানিগঞ্জের মধ্যে চলেছে। তারপর ছিল জামালপুর ওয়ার্কশপে। ১৯০৯ সালে তাকে কর্মজীবন থেকে অবসরে পাঠানো হয়। সেই অবসর ভেঙে ফের পথে নেমে এই ইঞ্জিন সাক্ষী হবে স্বাধীন ভারতের অমৃত মহোৎসবের বর্ষপূর্তির।
মধ্যেও একবার পথে নেমেছিল, ২০১০-এ। চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে আবাদি পর্যন্ত হেরিটেজ ট্রেন চালানোর জন্য এই ইঞ্জিনকে নামানো হয়েছিল। ১৩০ হর্স পাওয়ারের বুক থেকে কালো ধোঁয়া আকাশের দিকে ছাড়তে ছাড়তে এই ইঞ্জিন সোমবারের স্বাধীনতা দিবসে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটে যাবে এগমোর থেকে কদমবাক্কাম।
Read full story in English