ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার 'মাশুল' গুণলেন দলিত-যুবক। যুবকের বাড়িতে চড়াও গ্রামেরই উচ্চবর্ণের 'মাতব্বররা'। বাঁশ, লাঠি নিয়ে চলে বেপরোয়া ভাঙচুর। দলিত পরিবারের বেশ কয়েকজনকে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। নিরাপত্তা চেয়ে শেষমেশ পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। তদন্তে নেমে হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোট ২৩ জনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার এই ঘটনা ঘিরে নিন্দার ঝড় সর্বত্র।
২০২২-এও জাতপাতের দ্বন্দ্ব পিছু ছাড়ছে না। উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এখনও জাতপাতের সমীকরণটা যে কতটা ভয়ঙ্কর, চোখে আঙুল দিয়ে মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার এই ঘটনা তা আরও একবার দেখিয়ে দিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চবর্ণের লোধি ঠাকুর সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রাম বলে পরিচিত মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার গনিয়ারি গ্রাম। প্রথমবারের মতো এই গ্রামে দলিত সম্প্রদায়ের এক যুবক ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন। দলিত সম্প্রদায়ের যুবক হয়ে ওই যুবকের ঘোড়ায় চড়ে বিয়েতেই যত 'আপত্তি' গ্রামের উচ্চ বর্ণের মাতব্বরদের, উঠেছে এমনই অভিযোগ।
অভিযোগ, রবিবার রাতে গনিয়ারি গ্রামে ওই দলিত পরিবারের বাড়িতে চড়াও হয় এলাকারই উচ্চবর্ণের লোকজনদের একাংশ। বেপরোয়াভাবে বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। সাগর জেলা পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই বুন্দা থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়েছে। এফআইআর-এ আটজনের নামের উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া নামহীন আরও ১৫ জনের উল্লেখ রয়েছে এফআইআর-এ। বুন্দা থানার পুলিশ আধিকারিক মানস দ্বিবেদী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে ৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
মধ্যপ্রদেশ সাগরের দলিত যুবক দিলীপ আহিরওয়ার। বছর সাতাশের এই যুবক ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, দিলীপ ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার প্রায় ৫ ঘণ্টা পর তাঁর বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুঁড়তে শুরু করে উচ্চ বর্ণের লোকজন। এমনকী বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁদের মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
আরও পড়ুন- পুনরায় স্কুল খুললো, কিন্তু প্রথম দিনে ক্লাসে হাজিরা ৫০ শতাংশের নীচে
দিলীপের আত্মীয় প্রমোদ আহিরওয়ার। হামলায় এই যুবকও চোট পেয়েছেন। তিনি বলেন, ''রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। তারই কয়েক মিনিট পর শ'খানেক লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। মারধর, ভাঙচুর শুরু করে। মহিলাদেরও রেয়াত করেনি। সবাইকে মারধর করে।''
দিলীপের বাবা দেবেন্দ্র আহিরওয়ার বলেন, ''সোমবারও উচ্চবর্ণের লোকজন আমাদের আবার হুমকি দিয়েছে। অহিরওয়ার সম্প্রদায়ের আর কেউ ঘোড়ায় চড়বে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।"
যদিও স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক তার নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বুন্দা টাউন থানার পুলিশ আধিকারিক মানস দ্বিবেদী জানিয়েছেন, ঠাকুর সম্প্রদায়ের কয়েকজন তাদের এলাকা থেকে তার পারাপারে আপত্তি জানান। মত্ত অবস্থায় দিলীপ আহিরওয়ারের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
Read story in English