গত ৪ মে-এর একটি ঘটনার ব্যাপারে একটি ‘জিরো এফআইআর’ দায়ের করার কয়েক দিন আগে, মণিপুরের থৌবাল জেলায় দুই আদিবাসী মহিলাকে অপহরণ করে নগ্নদেহে হাঁটানো হয়েছিল। সঙ্গে চলেছিল তাঁদের যৌন হেনস্তাও। একই থানায় আরেকটি জিরো এফআইআর দায়ের হয়েছিল অপহরণ, ধর্ষণ এবং দুই কুকি-জোমি মহিলার হত্যা সংক্রান্ত। এই ক্ষেত্রেও, ইম্ফল পূর্বের সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ স্থানান্তর করতে কর্তৃপক্ষের এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছে।
ঘটনাটি ঘটে গত ৫ মে। সেই সময় সেখানে ২১ এবং ২৪ বছর বয়সি দুই কুকি-জোমি যুবতী, যাঁরা ইম্ফল-পূর্বে একটি গাড়ি ধোয়ার কাজ করত, তাঁদের ভাড়া করা বাড়িতে ‘কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি তাঁদের ধর্ষণ করে এবং ভয়ংকর (অত্যন্ত) অত্যাচারের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে’। হামলাকারীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০০ বলেই অনুমান তদন্তকারীদের। এরপর, গত ১৬ মে নিহতদের মধ্যে ২১ বছর বয়সি মেয়েটির মায়ের বিবৃতি অনুযায়ী কাংপোকপি জেলার সাইকুল থানায় একটি জিরো এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছিল। এই সাইকুলেই থাকতেন নিহত দুই যুবতী।
এরপর ১৩ জুন এই এফআইআরটি ইম্ফল-পূর্ব জেলার পোরোম্পট থানায় স্থানান্তর করা হয়। যদিও নিহতদের পরিবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে যে তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়েছে কি না, তা তাঁরা জানেন না। পুলিশ সূত্রে খবর যে এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জিরো এফআইআর কী?
যখন একটি থানা অন্য থানার এক্তিয়ারে সংঘটিত কোনও অপরাধের ব্যাপারে অভিযোগ পায়, তখন ওই থানা একটি এফআইআর দায়ের করে। তারপরে আরও তদন্তের জন্য সেই এফআইআর সংশ্লিষ্ট থানায় স্থানান্তর করা হয়। একে জিরো এফআইআর বলে। এক্ষেত্রে নিয়মিত এফআইআর নম্বর দেওয়া হয় না। জিরো এফআইআর পাওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট থানা একটি নতুন এফআইআর নথিভুক্ত করে এবং তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ কী বলছে?
বিপুল সংখ্যক ত্রাণ শিবির সহ এলাকার থানাগুলিতে প্রচুর সংখ্যক জিরো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। চুরাচাঁদপুর জেলার সীমান্তের কাছে মেইতি-অধ্যুষিত বিষ্ণুপুরের মইরাং থানায়, ১২৫৭টির বেশি জিরো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এবিষয়ে রাজ্য পুলিশের এক সিনিয়ার আধিকারিক জানিয়েছেন, “রাজ্য জুড়ে হাজার হাজার জিরো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে,”। তিনি আরও জানিয়েছেন, "ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা না করে তদন্তে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন। আপনি ফোনে কথা বলতে পারেন, কিন্তু এ্র থেকে একটি পরিষ্কার ছবি পাওয়া যাবেন না। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে”। পরিস্থিতির কারণে, এক সম্প্রদায়ের পুলিশ সদস্যরা অন্য সম্প্রদায়ের এলাকায় যেতে পারছেন না ফলে বিপূল সংখ্যক জিরো এফআইআর দায়ের করা হলেও তা নিষ্পত্তি সম্ভব হয়ে উঠছে না" । জিরো এফআইআর রাজ্য পুলিশকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে"।