সোমবার সকাল থেকেই নিখোঁজ প্রিয়জনদের খোঁজ করছিলেন করণদীপ শর্মা। হিমাচল প্রদেশের সিমলার সামার হিল এলাকায় ধসে পড়া শিব বাওয়ারি মন্দিরে জড় হওয়া দুই ডজনেরও বেশি ভক্তের মধ্যে ছিলেন করণদীপের প্রিয়জনদের অনেকেই। ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধসের পর মন্দিরটি এখন ধ্বংসস্তূপ। ভক্তরা তার তলায় সমাহিত। যখন উদ্ধারকারী দলের লোকজন একটি মৃতদেহ বা একটি বিকৃত অঙ্গের সন্ধান পেয়েছেন, তখনই করণদীপ এবং তাঁর মতো আরও অনেকে ছুটে গিয়েছেন উদ্ধারকারীরা কী বলছেন, তা শুনতে। ওই অঙ্গ তাঁদের প্রিয়জনের কারও কি না, সেটা বোঝাই তখন তাঁদের ছিল প্রধান উদ্দেশ্য।
উপস্থিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের করণদীপ বলেন, 'আমার কাকা পবন শর্মা (৬০), তাঁর পুরো পরিবার— স্ত্রী সন্তোষ শর্মা (৫৭), ছেলে আমন শর্মা (৩২), পুত্রবধূ অর্চনা শর্মা (২৭) এবং দেড় থেকে ১২ বছরের মধ্যে বয়সি তিন নাতনি- এই ভয়াবহ দুঘর্টনার সময় মন্দিরে ছিল। বছর ৩৩-এর করণদীপ আইটি পেশাদার। কাজ করে চণ্ডীগড়ে। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত, আমার কাকিমা সন্তোষ শর্মা, খুড়তুতো ভাই আমন শর্মা ও তাঁর এক নাতনি শেষ্যার মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। পবন শর্মা, অর্চনা শর্মা এবং আমার দুই ভাইঝিও এখনও নিখোঁজ। আমি আশা করি, তাঁরা কোথাও নিরাপদেই আছে।'
নিখোঁজ পবন শর্মা সামার হিলের স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি সুমার হিল মার্কেটে তাঁর ছেলের নামে নামকরণ করা কয়েক দশকের পুরোনো আমন ইলেক্ট্রিক্যালস দোকানে বসতেন। এই দোকান এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। পবন শর্মার খুড়তুতো ভাই মোহিত শর্মা বলেন, 'পবন শর্মা সোমবার মন্দিরে একটি পুজোর আয়োজন করেছিলেন। এই কারণেই তাঁর পুরো পরিবার মন্দিরে এসেছিল। আমাকে বলা হয়েছিল যে যখন ট্র্যাজেডি হয়েছিল, তখন তাঁরা পুরোহিতের সঙ্গে মন্দিরের মূল প্রাঙ্গণে ছিলেন। এই মূল প্রাঙ্গণও ধসে তলিয়ে গিয়েছে। মন্দিরে যিনি আরতি করছিলেন, সেই পুরোহিত সুমন পণ্ডিতও ধসের পর থেকেই নিখোঁজ।
আরও পড়ুন- ন্যায্য মূল্যের ওষুধের রমরমা বিক্রি, তার বিরুদ্ধে কেন প্রতিবাদ করছেন ডাক্তাররা?
সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মন্দিরটি কার্যত ভেসে যাওয়ার পর উদ্ধারকারী দল এপর্যন্ত ১১টি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে। দুর্ঘটনার সময় মন্দিরে আরতি চলছিল। স্থানীয় প্রায় ৩০ জন মন্দিরে ছিলেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ) দল ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধারকাজে নামে। রমেশ শর্মা (৫৫) বিলাসপুরের একটি সরকারি সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের একজন প্রধান শিক্ষক, তিনিও ওই মন্দির ভেঙে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ। তাঁর সঙ্গেই নিখোঁজ রমেশ শর্মার ভাই তথা হিমাচলপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টর ড. পিএল শর্মা (৫৯), ড. পিএল শর্মার স্ত্রী রেখা শর্মা (৫৪) ও তাঁদের ছেলে পিএইচডি স্কলার ইশ শর্মা (২৬)।