ওড়িশার একটি মদ প্রস্তুতকারক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আয়কর অভিযানের গতি তীব্র হল। ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা এবং গয়না। আয়কর বিভাগ শনিবারও বোলাঙ্গির সুদাপাড়া এলাকায় তাদের নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করা অব্যাহত রেখেছে। কর বিভাগ নোট গুণতে প্রায় ৪০টি বড় এবং ছোট মেশিন এনেছে। গণনা প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার জন্য আরও লোকজন এবং ব্যাংক কর্মীদেরও আনা হয়েছে । গত ৬ ডিসেম্বর থেকে বৌধ ডিস্টিলারিজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং এর অংশীদার সংস্থা বালদেও সাহু অ্যান্ড গ্রুপ অফ কোম্পানিজের বিরুদ্ধে এই আয়কর অভিযান শুরু হয়েছে।
শনিবার কী হয়েছে?
শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ২২৫ কোটি টাকা উদ্ধার করার পরে, শনিবার বোলাঙ্গির জেলার সুদাপাড়া এলাকায় একটি দেশী মদ প্রস্তুতকারকের বাড়ি থেকে আয়কর দফতরের আধিকারিকরা আরও ২০ ব্যাগবোঝাই নগদ অর্থ বাজেয়াপ্ত করেছে। নগদভর্তি মোট ১৭৬টি ব্যাগ এসবিআইয়ের বালাঙ্গির শাখায় আনা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৪৬ কোটি টাকার নগদ-সহ মাত্র ৪০টি ব্যাগের গণনা শেষ হয়েছে। কর বিভাগ নোট গুণতে প্রায় ৪০টি বড় এবং ছোট মেশিন এনেছে। গণনা প্রক্রিয়াটি শেষ করতে আরও বিভিন্ন বিভাগের ব্যাংক কর্মীদের আনা হয়েছে।
এপর্যন্ত কত টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে?
আয়কর বিভাগের অভিযানের পরে 'হিসেবহীন' বাজেয়াপ্ত করা নগদের পরিমাণ ২৯০ কোটি টাকায় পৌঁছবে বলে আশা করছে আয়কর দফতর। এমনটাই সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই ২৫০ কোটি টাকারও বেশি নগদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ওড়িশার সরকারি ব্যাংকের শাখাগুলোতে ক্রমশ নগদ টাকা জমা হচ্ছে। নোটগুলো মূলত ৫০০ টাকার। এটি একটি সংস্থা অথবা শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাজেয়াপ্ত করা সর্বোচ্চ নগদ বলেই জানিয়েছে আয়কর দফতর। বাজেয়াপ্ত করা অর্থের মধ্যে বোলাঙ্গির জেলায় ওই কোম্পানির একটি উঠোনে রাখা প্রায় ৮-১০টি আলমারি থেকে ২৩০ কোটি টাকা নগদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাকি অর্থ বাজেয়াপ্ত হয়েছে ওই সংস্থার টিটলাগড়, সম্বলপুর এবং রাঁচির কারখানা থেকে।
কেন অভিযান চলছে?
আয়কর বিভাগ মদ প্রস্তুতকারী, বিক্রেতা এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলির দ্বারা বিপুল পরিমাণ হিসাব বহির্ভূত বিক্রয় এবং নগদ লেনদেনের খবর পাওয়ার পর এই অভিযান শুরু করে। কর ফাঁকির অভিযোগে ৬ ডিসেম্বর প্রথমে বৌধ ডিস্টিলারিজ প্রাইভেট লিমিটেডে অভিযান চালানো হয়। পরে বালদেও সাহু এবং গ্রুপ অফ কোম্পানির প্রাঙ্গণে চালানো হয় তল্লাশি। সেখান থেকে ১৫৬ ব্যাগ নগদ উদ্ধার হয়েছে। পরে ওডিশার তিতলাগড়, সম্বলপুর, সুন্দরগড় এবং ভুবনেশ্বরে আর ঝাড়খণ্ডে কয়েকটি জায়গায় একযোগে অভিযান চালানো হয় বলেই সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি রউরকেল্লা, রায়গড়ায় কিছু মদ ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হয়।
সাংসদ ধীরাজ সাহু কে এবং কংগ্রেস কী বলেছে?
আইটি সূত্রের মতে, বালদেও সাহু অ্যান্ড গ্রুপ অফ কোম্পানিজ লিমিটেড, ওডিশার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলি জুড়ে কাজ করে। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ ধীরাজ সাহুর সঙ্গে এই সব কোম্পানি জড়িত। ধীরাজ সাহুর পরিবারের সদস্যরা এই ব্যবসা চালান। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে, সাহুর সঙ্গে যুক্ত সম্পত্তিগুলিতেও অভিযান চালানো হয়েছে। সাহু তিনবার রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংসদের পরামর্শদাতা, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রকের কমিটির সদস্য। তিনি ১৯৭৭ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। বলদেও সাহু অ্যান্ড গ্রুপ অফ কোম্পানিজের শেয়ার হোল্ডারদের উত্পাদন ইউনিট এবং প্রাঙ্গণেও অভিযান চালানো হয়েছে। এই সব, অভিযানের পরে আয়কর দফতর এখন এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তির অফিস এবং বাসস্থানেও অভিযান চালাচ্ছে। ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের মুখপাত্র রাকেশ সিনহা এই আয়কর অভিযান প্রসঙ্গে বলেছেন, 'ধীরাজ প্রসাদ সাহুর ব্যবসা অনেক পুরনো। তাঁর সম্পদ রাতারাতি বৃদ্ধি পায়নি। ওড়িশায় প্রায় সমস্ত দেশীয় মদের উৎপাদন ও বিক্রির মালিকানা ধীরাজ সাহুর। যেখানে লেনদেন নগদে হয়। তারা আতিথেয়তা, পরিবহণ, মৎস্য, মদ এবং অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। এছাড়াও, যতদূর আমরা জানি, আয়কর বিভাগ তাঁকে কিছুই জানায়নি।'
আরও পড়ুন- দেশবিরোধিতা ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে টক্করে জয়ী দানিশ, দলবিরোধিতার অভিযোগে বিএসপি থেকে বহিষ্কৃত
অভিযান সম্পর্কে কী বলছেন প্রধানমন্ত্রী?
এই অভিযানগুলোকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি সংবাদপত্রের ক্লিপিং পোস্ট করেছেন। যাতে অভিযানের সময় প্রচুর পরিমাণে নোট উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কংগ্রেসকে নিশানা করে মোদী লিখেছেন, 'দেশবাসীর উচিত এই নোটের স্তূপের দিকে নজর দেওয়া এবং তারপরে তাঁদের নেতাদের সৎ বক্তৃতা শোনা। জনগণের কাছ থেকে যা কিছু লুঠ করা হয়েছে, প্রতিটি পয়সা ফেরত দিতে হবে, এটি মোদীর গ্যারান্টি।'