বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিন, বিবিসির ভারতের দিল্লি ও মুম্বই অফিসে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা অফিসের কিছু কর্মীদের কাছ থেকে আর্থিক লেনদেন সক্রান্ত তথ্য – ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এবং কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে সংগ্রহ করেছেন। সংস্থার দিল্লি এবং মুম্বই অফিসে এই নিয়ে টানা তৃতীয় দিন চলছে আয়কর দফতরের তদন্ত।
আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা আর্থিক লেনদেন, কোম্পানির অন্যান্য কিছু বিবরণের নথি দেখতে চেয়েছেন বলে সূত্রের খবর। যদিও আয়কর বিভাগ এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেনি। বিবিসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা কর্তৃপক্ষকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দিল্লি এবং মুম্বইয়ের ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) অফিসে শুরু হওয়া অপারেশন ৪৫ ঘণ্টারও বেশি সময় পার করেছে বলেই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিরোধী দলগুলি বিবিসি’র অফিসে আয়কর হানার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সেই সঙ্গে আয়কর বিভাগের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছে, এটিকে "রাজনৈতিক প্রতিহিংসা" বলে অভিহিত করেছেন। কংগ্রেস অভিযোগ করেছে ‘BBC-তে I-T অ্যাকশন ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে’।
বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে মঙ্গলবার হানা দেয় আয়কর বিভাগ। আয়কর বিভাগ বিবিসির বিরুদ্ধে কর অনিয়মের তদন্ত করছে। কর ফাঁকির তদন্তে মঙ্গল ও বুধবার দিনভর বিবিসির দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে তদন্ত চালায় আয়কর বিভাগ। মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ আয়কর দফতরের এই অভিযান শুরু হয় এবং জানা ৪৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিবিসি অফিসে অভিযান চালায় আয়কর বিভাগ। এদিকে সংবাদ সংস্থা এআনআই জানিয়েছে গতকালের পর আজও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিবিসি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে “আমাদের আউটপুট এবং সাংবাদিকতা বিভাগ তার স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ভারতে আমাদের দর্শকদের কাছে সংবাদ পরিবেশন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিবিসির অ্যাকাউন্টের বেশ কিছু নথি যাচাই করা হয়েছে বলেই আয়কর দফতর সূত্রে খবর। সূত্রের খবর, তদন্তের সময় অফিসের সকল কর্মচারীর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট সেকশনে রাখা কম্পিউটারের নথিও পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, মোবাইল ও ডেস্কটপের ব্যাকআপ নেওয়া হয়েছে। এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া সহ অসংখ্য সংবাদ সংস্থা এই হানার নিন্দা জানিয়েছেন। এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, “সরকারি নীতির সমালোচনা করায় প্রেসকে ভয় দেখানো বা হয়রানি করার জন্য সরকারি সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে কেন্দ্র।
এদিনের হানার বিষয়ে বিবিসির লন্ডন সদর দফতরও জানানো হয়েছে। বিবিসি গুজরাট দাঙ্গা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর একটি তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ প্রকাশ্যে আনার কয়েক সপ্তাহ পরে আইটি হানা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। যদিও এই তথ্যচিত্র ভারতে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। বিবিসি জানিয়েছে, তারা তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে।
বিবিসি দিল্লি অফিসের তরফে জানানো হয়েছে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় আয়কর কর্মকর্তারা বিবিসি অফিসে পৌঁছান এবং তারপর থেকে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা তদন্তের কাজ শুরু করে। সূত্রের খবর, আয়কর কর্তৃপক্ষ বিবিসির ‘অননুমোদিত কর সুবিধা, কর ফাঁকি, এবং অসহযোগিতার’ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করছে। বিসির দিল্লি অফিসে ৬০-৭০ জনের একটি দল ‘হানা’ দেয়। বিবিসি কর্মীদের ফোন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হয়নি।
এই ঘটনার পর অবশ্য বিবিসির তরফে এক টুইট বার্তায় প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়। তাতে জানানো হয়, দিল্লি ও মুম্বইয়ের অফিসে আয়কর আধিকারিকরা এসেছেন। তাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ পূর্ণ সহযোগিতা করছে। আশা করছি শীঘ্রই এই পরিস্থিতির সমাধান হবে।