গাজা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাবনা থেকে দূরত্ব বজায় রাখল ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের সংঘর্ষ নিয়ে ভোটাভুটি থেকে দুরত্ব বজায় রাখল থাকল ভারত। তবে ভারতের পক্ষে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে গাজায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছে ভারত।
গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আজ (২৮ অক্টোবর) ২২তম দিনে পৌঁছেছে। উভয় পক্ষের এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত আট হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু ইজরাইল এখনও গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ করছে। এসবের মধ্যেই শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের বিষয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। জর্ডানের উপস্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থাকে ভারত।
জর্ডান “নাগরিক সুরক্ষা এবং আইনি ও মানবিক দায়িত্ব পালন”শীর্ষক একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করে। এই প্রস্তাব সমর্থন করে বাংলাদেশ, মলদ্বীপ, পাকিস্তান, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সহ ৪০টিরও বেশি দেশে। তবে এই প্রস্তাবে হামাসের উল্লেখ ছিল না। ভোটাভুটি শুরু হলে রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১২০টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় এবং ১৪টি দেশ এর বিপক্ষে ভোট দেয়। ভোটদান থেকে বিরত থাকে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান, ইউক্রেন ও ব্রিটেন সহ ৪৫টি দেশ।
প্রস্তাবনায় গাজায় 'মানবিক যুদ্ধবিরতির' আবেদন জানানো হয়। ১৯৩ সদস্যের রাষ্ট্রপুঞ্জের ৪৫ সদস্যদেশের অনুপস্থিতিতে প্রস্তাবটি ১২০-১৪ ভোটে গৃহীত হয়। যে দেশগুলো ভোটদানে বিরত থাকে তাদের মধ্যে ভারতও ছিল। ভোটাভুটির পর ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈধতা এবং প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ইজরায়েল আত্মরক্ষা্র ধারা অব্যাহত রাখবে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের অস্তিত্বকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর। হামাসের নৃশংসতাকে বিশ্বকে মুক্ত করতে ইজরায়েল তার লক্ষ্যে অটূট”।
কী বলল ভারত?
রাষ্ট্রসংঘের দশম জরুরি বিশেষ অধিবেশনের সভায় গৃহীত প্রস্তাবের বিষয়ে, ভারতের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত যোজনা প্যাটেল বলেছেন যে 'গাজায় চলমান সংঘাতে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যুদ্ধে জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হচ্ছে। এই সংকটের সমাধান করা দরকার। উত্তেজনা প্রশমনে এবং গাজার জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত জানাই। ভারতও এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করেছে।ভারতীয় রাষ্ট্রদূত জোর দিয়েছিলেন যে ভারত সবসময় আলোচনার মাধ্যমে ইজরাইল-প্যালেস্তাইনি সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করেছে। যদিও ইজরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলার তীব্র নিন্দা করেছে ভারত।
ভারত 'হামাসের সন্ত্রাসী হামলার' নিন্দা জানিয়ে কানাডার নেতৃত্বাধীন সংশোধনীর পক্ষে ভোট দিয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এই খসড়া প্রস্তাবটি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হতে পারেনি। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ গাজার অভ্যন্তরে আটকে পড়া নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের জীবনদায়ী ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবার ক্রমাগত, পর্যাপ্ত এবং নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের দাবি জানিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ভোটগ্রহণ এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন ইজরাইল গাজায় তাদের স্থল অভিযান জোরদার করেছে।