সীমান্ত উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। উত্তেজনা প্রশমণে ভারত-চিন সেনা ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনাও জারি রয়েছে। যা নিরবিচ্ছিন্নভাবে জারি রাখার পক্ষেই নয়াদিল্লি। তবে, এর মাঝেও চিনের আগ্রাসী কার্যকলাপ উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যার মোকাবিলায় প্রয়োজনে 'সামারিক জবাব' দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকা উচিত বলে মনে করছে ভারত। ইতিমধ্যেই উচ্চ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে সিলমোহরও দেওয়া হয়েছে।
ভারত-চিন সীমান্ত বিরোধ নিয়ে বৈঠকে উল্লেখযোগ্যভাবে 'সংঘর্ষ ও লড়াই' প্রসঙ্গ উঠে আসে। শীর্ষস্তরের সূত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একথা জানিয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক আমলা জানান, 'ভারত উত্তেজনার বাড়বাড়ন্ত চায় না। কিন্তু, চিনের সঙ্গে আপোস করাও সম্ভব নয়। পিছিয়ে যাওয়ার বদলে ওদের মুখোমুখি হতে হবে।' সামরিক সংঘর্ষের পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে? এ ই প্রশ্নের জবাবে আমলা বলেছেন, 'পরণতি কী তা আগে থেকে ভাবলে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সরকারের এটাই দৃষ্টিভঙ্গি।'
১৫ জুন সংঘর্ষে চিনা সেনার আক্রমণে ২০ ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, লাল ফৌজের আগ্রাসী মনোভাব আরও বেড়েছে। এ জন্যই সামরিক জবাবের জন্য প্রস্তুত থাকার সংকল্প নেওয়া হয়েছে। আধিকারিকের কথায়, 'ওরা আমাদের সেনাদের মারল। ওরাই দুঃখ প্রকাশ বা অনুশোচনা করবে তা আশা করি না। কিন্তু চিনই বলে চলেছে যে ভারতীয়রা নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ওদের দেশে ঢুকেছিল, সংঘর্ষের দায় ভারতীয় সেনার। এরপর ওদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট।'
কমান্ড পর্যায়ের বৈঠকে নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরাতে ভারত-চিন সম্মতি প্রকাশ করেছে। তবে লাল ফৌজের মুখে ও কাজে বিস্তর অমিল। সেনা সরানোর বদলে নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা ও সমরাস্ত্র মজুত বাড়াচ্ছে চিন। উপগ্রহ চিত্রে প্রকাশ গালওয়ান উপত্যকায় নতুন করে চিনের আরও বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনির গড়ে উঠেছে। ভারতীয় বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণরেখায় টহল দিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ দিল্লির। আমলার মতে, 'কথা মতো কাজ করছে না বেজিং। ওদের একমাত্র লক্ষ হল ভারতকে দোষী সাব্যস্ত করা।'
সূত্র অনুসারে এপ্রিলের শুরুতেই নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনা নির্মাণের খবর দিল্লিতে পৌঁছেছিল। তখনই সেনা সেখানে নজরদারি বৃদ্ধি ও রেইকির নির্দেশ দেওয়া হয় দিল্লির তরফে। পরবর্তী ক্ষেত্রে চিনের কার্যকলাপে সেই খবরের সত্যতা প্রমাণইত হয়। সর্বদল বৈঠকে তা জানানো হয়েছিল। বিদেশমন্ত্রকও সুনির্দষ্টভাবে জানিয়েছে যে, দু'দেশের মধ্যে চুক্তি চিনই প্রথম লংঘন করেছে।
'ভারতীয় ভূখণ্ডে কেই অনুপ্রবেশ করেনি।' প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য বৈঠকে উপস্থিত আমলা এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে, ইন্দো-চিন সীমান্ত প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থানে কোনও আপোস হবে না বলেই মত তাঁর।
সামরিক সংঘর্ষ হলে ইন্দো-চিন বাণিজ্য ক্ষেত্রে কী বড় আঘাত লাগতে পারে, এর ফলে কী ভারতের অর্থনীতি চ্য়ালেঞ্জের মুখে পড়বে? কেন্দ্রীয় সরকারের এক বাণিজ্য পরামর্শকারী জানান, 'ভারতীয় অর্থনীতির বিকাশ আস্তাহীন চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশল নয়। দেশের মধ্যেও জাতীয়বাদী আবেগ তীব্র।' একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থকে ব্যাহত করতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
এজন্যই অধিকারিক জানিয়েছিলেন, ভারতের বিকল্প নেই। পরিস্থিতি প্রশমণে সেনা ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনাই প্রথমে জরুরি। তাঁর কথায়, 'বর্তমানে যুদ্ধে কোরোরই জয়-পরাজয় হয় না। ২০২০ ও ১৯৬২-র ভারতে বিস্তর তফাৎ। বিশ্বজুড়ে এখন বহু দেশ ভারতের পাশে রয়েছে। আমাদের এটাই কাজে লাগাতে হবে। চিন নিয়ন্ত্রণরেখা ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার, ভয় দেখিয়ে সুপার পাওয়ার হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু, অন্যান্য দেশকে সঙ্গে নিয়ে চিনের উপর চাপ তৈরি করতে হবে। তাদের পিছু হঠতেই হবে- এটা বোঝাতে হবে।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন