বিশ্ব খাদ্য দিবসে সামনে এলো উদ্বেগজনক তথ্য। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক (Global Hunger Index বা GHI) ২০১৯ এর তালিকায় ১১৭টি দেশের মধ্যে ১০২ নম্বরে নেমে গিয়েছে ভারতের অবস্থান, পড়শি রাষ্ট্র নেপাল, বাংলাদেশ, এবং পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে। গত বছর এই তালিকায় ভারতের ক্রমসংখ্যা ছিল ৯৫।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে বেলারুশ, ইউক্রেইন, তুরস্ক, কিউবা, এবং কুয়েত সহ ১৭টি দেশ, যাদের প্রত্যেকেরই GHI স্কোর পাঁচের কম। বুধবার এমনটাই বলা হয়েছে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের ওয়েবসাইটে। সারা পৃথিবীতে ক্ষুধা এবং অপুষ্টির খতিয়ান রাখে এই সংগঠন। GHI রিপোর্টটি যৌথভাবে প্রস্তুত করেছে আইরিশ ত্রাণদায়ী সংগঠন 'কন্সার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড' এবং জার্মান সংস্থা 'ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফা', যাদের মতে ভারতে ক্ষুধার মাত্রা বর্তমানে 'গুরুতর'।
২০০০ সালে ১১৩টি দেশের মধ্যে ভারতের ক্রমসংখ্যা ছিল ৮৩। এবছর ১১৭টি দেশের মধ্যে সেই সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০২। অবনতি হয়েছে ভারতের GHI স্কোরেরও - ২০০৫ সালে ৩৮.৫ থেকে ২০১০-এ ৩২, এবং ২০১০ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে ৩২ থেকে নেমে ৩০.৩।
মূলত চারটি নির্দেশক মেনে নির্ণয় করা হয় GHI স্কোর - ১) অপর্যাপ্ত পুষ্টি; ২) শিশুদের ক্ষয়, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ক্ষয়ের পরিমাণ (অর্থাৎ উচ্চতার তুলনায় কম ওজন, যার মূলে থাকে পুষ্টির অভাব); ৩) শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে বয়সের তুলনায় কম উচ্চতার হার (যার অর্থ হলো দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি); এবং ৪) পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে শিশুদের মধ্যে ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ক্ষয়ের হার ছিল ১৬.৫ শতাংশ, যা ২০১৪ থেকে ২০১৮-র মধ্যে বেড়ে হয়ে যায় ২০.৮ শতাংশ। ছ'মাস থেকে ২৩ মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মাত্র ৯.৬ শতাংশের ভাগ্যে জোটে "ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য আহার"। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, "ভারতে শিশু ক্ষয়ের পরিমাণ ২০.৮ শতাংশ, যা অত্যন্ত বেশি, এবং এই রিপোর্টে তালিকাভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।"
রিপোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন বা জলবায়ুর সমস্যায় জর্জরিত জিবুতির মতো দেশও ভারতের চেয়ে শিশু ক্ষয়ের নিরিখে উন্নততর জায়গায় রয়েছে।
'গুরুতর' ক্ষুধা বিভাগে অবস্থান করছে ভারতের পড়শি রাষ্ট্র নেপাল (৭৩), শ্রীলঙ্কা (৬৬), বাংলাদেশ (৮৮), মায়ানমার (৬৯) এবং পাকিস্তানও (৯৪), কিন্তু এরা প্রত্যেকেই নাগরিকদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে সফল। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কাকে উন্নত করা হয়েছে 'গুরুতর' থেকে 'মাঝারি' ক্ষুধা বিভাগে, এবং চিন (২৫) আপাতত 'নিম্ন' ক্ষুধা বিভাগে স্থান পেয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে আশার আলো অবশ্যই রয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হার কমেছে ভারতে, যেমন কমেছে অপর্যাপ্ত খাদ্য এবং অপুষ্টির ফলে তাদের ক্ষয়প্রাপ্তির হার। রিপোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দেশে এখনও খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা হয়। "নতুন শৌচালয় নির্মাণ করা সত্ত্বেও খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা, এবং এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুদের বৃদ্ধি এবং বিকাশও, যেহেতু খাদ্যের গুণ গ্রহণ করতে পারে না তাদের শরীর।"