Indo-China Border: এক তরফা ভাবে নেওয়া চিনের নতুন স্থলসীমান্ত আইনে উদ্বেগ প্রকাশ করল ভারত। বিদেশ মন্ত্রক এই মর্মে বিবৃতি জারি করেছে। মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘চিনের গৃহীত নয়া স্থলসীমান্ত আইনে দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রভাবিত হবে। পাশাপাশি নতুন আইনে দ্বিপাক্ষিক স্তরে ঝুলে থাকা সীমান্ত বোঝাপড়া প্রশ্নের মুখে পড়বে।
চলতি মাসেই চিনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটি নতুন আইনের খসড়ায় সিলমোহর বসিয়েছে। পয়লা জানুয়ারি থেকে এই আইন কার্যকর হবে। সেই আইনে উল্লেখ, ‘চিনের সার্বভৌমত্ব এবং ভূমি অখণ্ডতা অবিচ্ছেদ্য। সেই জায়গায় কোনও বাহ্যিক হুমকি এলে পড়শি রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটবে পিপলস লিবারেশন আর্মি। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় সার্বিক এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে। আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধান করবে বেজিং।‘
এই নয়া আইন ঘিরে উদ্বেগ বেড়েছে সাউথ ব্লক। সাম্প্রতিক কালে একাধিক ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বে জরিয়েছে চিন। পূর্ব লাদাখ থেকে অরুণাচল, নানাভাবে পড়শি দুই দেশের মনোমালিন্যের কারণ হয়েছে। ইতিমধ্যে চিনকে জবাব দিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক সম্ভার বাড়ানো শুরু করেছে দিল্লি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামরিক ভাবে এখনই স্থলসীমান্ত দখলের পথে হাঁটতে চায় না বেজিং। তাই ঘুরিয়ে নয়া আইন প্রণয়ন করে দখলদারি চাইছে চিন। সেই দখলদারিতে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপত্তি তুলবে ভারত। সেই আপত্তির জবাব সামরিক ভাবে দিতে চায় শি জিনপিং সরকার।
তবে শুধু ভারত নয়, এই নয়া আইনে বিপন্ন হতে পারে নেপাল, ভূটান, তাইওয়ানের মতো দেশের সার্বভৌমত্ব। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ অরুণাচল প্রদেশ। চিনের আপত্তি উড়িয়ে সম্প্রতি এই ঘোষণা করছে নয়াদিল্লি। চলতি মাসে উপ-রাষ্ট্রপতির অরুণাচল সফর নিয়ে আপত্তি তোলে বেজিং। সেই আপত্তির পিছনে কোনও যুক্তি নেই এই মন্তব্য করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘আমরা চিনা আধিকারিকের মন্তব্য শুনেছি। এই ধরনের মন্তব্য খারিজ করছি। দেশের রাষ্ট্র নেতারা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য সরকারি কারণে সফর করেন। সেভাবেই অরুণাচল গিয়েছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি। চিনের এই মন্তব্যের কোনও কারণ নেই।‘
পাশাপাশি ভারত-চিন সীমান্ত দ্বন্দ্ব জিইয়ে রইল। চলতি মাসেই দু’পক্ষের মধ্যে ১৩তম রাউন্ডের কমান্ডার-স্তরের আলোচনা কার্যত নিষ্ফলা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফেই এই ইঙ্গিত মিলেছে। সাম্প্রতিক আলোচনায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্ট্যান্ড-অফ সমাধানের জন্য অচলাবস্থা কাটাতে চিনের তরফে সদর্থক ভূমিকা দেখা যায়নি বলেই জানাল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বৈঠকে চিন গঠনমূলক পরামর্শ দিলেও নানা প্রশ্নে সম্মতির ব্যাপারে তাদের ভূমিকা সদর্থক ছিল না। তারা কোনও দূরদর্শী প্রস্তাবও দিতে পারেনি।’ যদিও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে দু’তরফেই যাবতীয় পদক্ষেপের আশ্বাস মিলেছে।
বছরখানেক ধরে চিনের সঙ্গে সীমান্ত দ্বন্দ্ব জারি রয়েছে ভারতের। গত বছর গালওয়ানে চিন সেনার হামলায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন জওয়ান নিহত হন। পাল্টা ভারতের তরফেও যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার পর থেকেই লাদাখে ভারত-চিন সীমান্ত দ্বন্দ্ব বেড়েছে। তবে দ্বন্দ্ব কাটাতে উদ্যোগও জারি রয়েছে। এর আগে ১২ বার ভারত-চিন কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। চলতি মাসে হল ১৩তম বৈঠক। তবে সেই বৈঠকেও সমাধানসূত্র মেলেনি। গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘এটা আমাদের প্রত্যাশা, যে চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিবেচনা করবে। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং প্রটোকল সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার পাশাপাশি বাকি সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধানের দিকে কাজ করবে চিন।’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন