বিশ্বে দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স। আগে আফ্রিকাতেই বাড়ছিল। এখন আফ্রিকার বাইরে অন্যান্য মহাদেশেও দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে। প্রতিদিনই এই পরিসংখ্যান বৃদ্ধির ওপর নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মঙ্গলবার আর উদ্বেগ চেপে রাখতে পারল না ‘হু’। আফ্রিকা বাদে অন্যান্য মহাদেশেও মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডব্লিউএইচও বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, আফ্রিকার বাইরে অন্যান্য মহাদেশে মাঙ্কিপক্স-এর ২০০টি মত কেস শনাক্ত হয়েছে।
তবে, প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে হু কর্তাদের অনুমান, তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি! সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা যে রীতিমতো উদ্বেগজনক, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।৭ মে, আফ্রিকার বাইরের মহাদেশগুলোয় প্রথম মাঙ্কিপক্স ধরা পড়ে। তারপর ২৪ মে-এর মধ্যেই সেটা বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আর, সবচেয়ে বড় কথা শুধু বিভিন্ন দেশই নয়। এই দেশগুলো আবার বিভিন্ন মহাদেশের অধীনে। তার মানে, সেই সব মহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়েছে। খবর অনুসারে জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। আর তাতেই নতুন করে আতঙ্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে মানুষের মনে।
১৯৫০ এর দশকে এই ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ঘটে বাঁদরের মধ্যে। সম্প্রতি করোনার মধ্যেই বাড়বাড়ন্ত মাঙ্কিপক্সের। ইতিমধ্যেই ২০টি দেশে সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে যা নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গলাতেও। বর্তমানে, এই ভাইসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইজরায়েল, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্কটল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।যখন বিশ্বের একাধিক দেশে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। সম্প্রতি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক আধিকারিক মাঙ্কিপক্সের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আশঙ্কা করেছেন একাধিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি।
এবিষয়ে কী বলছে ICMR? আইসিএমআর বিজ্ঞানী ডাঃ অপর্ণা মুখার্জি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পশ্চিম আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সের একাধিক কেস শনাক্ত করা হয়েছে। আমাদের অস্বাভাবিক লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করা উচিত যেমন উচ্চ জ্বর, গায়ে র্যাশ, ফুসকুড়ি, বিশেষ করে যাদের ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে।
ট্রিভিট্রন হেলথকেয়ার নামে একটি মেডিকেল ডিভাইস ফার্ম দাবি করেছে তারা মানকিপক্স (অর্থোপক্সভাইরাস) ভাইরাস সনাক্তকরণের জন্য একটি রিয়েল-টাইম পিসিআর-ভিত্তিক কিট তৈরি করেছে, এর পাশাপাশি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছে এই মুহূর্তে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে গণ টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে যারা সংক্রামিত ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে টিকা নেওয়াটা একান্ত জরুরি।
এদিকে মাঙ্কিপক্স নিয়ে সাবধান রাজ্য। ইতিমধ্যেই সেরে রাখা হয়েছে যাবতীয় প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে বিশ্বের একাধিক দেশে ঢুকে পড়েছে নয়া এই ভাইরাস। যা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কপালে।
এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ইতিমধ্যে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্বের একাধিক দেশে মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশেষ নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভারতও এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক। ইতিমধ্যে একাধিক বিমানবন্দরে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্যগুলিকে মাঙ্কি পক্স নিয়ে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। আর সেই বার্তা আসার পরেই নয়া এই ভাইরাস নিয়ে বিশেষ সতর্কতা নবান্ন'র। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে কলকাতা পুরসভার তরফে। এবার বিদেশ থেকে রাজ্যে আসা ব্যক্তিদের উপর নজরদারি বাড়ানো হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। আর সেই সময়ে কোনও ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কি পক্সের উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত বলেও জানা গিয়েছে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে মাঙ্কিপক্সের বাড়বাড়ন্তের মাঝে আইসিএমআর সাফ জানিয়েছে মাঙ্কি পক্স সংক্রমণের ঘটনা রুখতে আইসিএমআর সর্বতোভাবে প্রস্তুত। আইসিএমআর বিজ্ঞানী ডাঃ অপর্ণা মুখার্জি বলেন, “মাঙ্কিপক্স নিয়ে লোকেদের প্যানিক করা একেবারেই উচিত নয়। এটা একদমই নতুন ভাইরাস নয়। আমাদের কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স নিজে থেকেই ২১ দিনের মাথায় সেরে যায়। তাই অযথা আতঙ্ক নয়, সতর্ক থাকুন” ।
Read in English