নানাভাবে এর আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এবার সতর্ক করলেন প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিনটন। বললেন যে, 'ইউক্রেনের উপর রুশ আগ্রাসন ভুল পদক্ষেপ। এটা দৃঢ়ভাবে এবার ভারতকে বলতে হবে।' পশ্চিমী দেশগুলির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে ইতিমদ্যেই ভারত পুতিনের দেশ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। এ নিয়েও মুখ খুলেছেন হিলারি। তাঁর দাবি, 'রাশিয়া থেকে ভারতের জ্বালানি আমদানির পরিমাণ সামান্য, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ভারত নিজেদের স্বার্থবাহী সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।'
টাইমস গ্রুপের এক আলোচনা চক্রে যোগ দিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। সেখানেই রাশিয়ার আগ্রাসন, চিনের অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব। ভারত-চিন সীমান্ত উত্তাপ এখনও জারি রয়েছে। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর দিল্লির পাশেই ছিল ওয়াশিংটন। হিলারির দাবি, চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সংঘর্ষের বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এই বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। ভারত আত্মরক্ষার্থে নানা পদক্ষেপকে আমেরিকা সমর্থন করে।'
হিলারির মুখে উঠে এসেছে তাইওয়ান প্রসঙ্গেও। তাঁর কথায়, আগ্রাসনের পর রাশিয়ার ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আরোপ করেছে আমেরিকা। ইউক্রেনের মতো বিশ্ব যদি তাইওয়ানের উপর এই ধরনের নৃশংস আগ্রাসন দেখে, তাহলে চিনের অর্থনীতিও কয়েক দশক পিছিয়ে পড়বে। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যে, মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জেরে রুশ অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। তাইওয়ানের সঙ্গে চিন এ ধরণর আচরণ করলেও একই পরিণতি হবে।
এর আগে মার্কিন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দলীপ সিং ভারতকে সতর্ক করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল যে, রাশিয়া থেকে ক্রমাগত তেল আমদানির পরিমাণ দিল্লি বৃদ্ধি করলে তার ফল ভুগতে হবে নয়াদিল্লিকে। কারণ ওয়াশিংটন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং আরও কড়া পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই আবহে ভারতকে তারা পাশে চায়। এই বিষয়ে দিল্লি সফরে এসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দালীপ সিং দেখা করেন বিদেশ সচিব হর্ষ শ্রীংলার সঙ্গে। তারপরই তিনি সাবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় বলেছিলেন, 'কেউ যদি এই নিষেধাজ্ঞাগুলিকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে তাদের এর ফল ভুগতে হবে৷'
জবাবে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছিলেন যে, 'যা তেল কিনি সেটা আমাদের শক্তি- নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু আমার মনে হয় যে, পরিসংখ্যান দেখলে আপনি দেখতে পারবেন যে, ভারত এক মাসে যা তেল কেনে, ইউরোপ এক বিকেলে তার থেকে বেশি তেল কেনে।'
হিলারি ক্লিনটনের মতে, 'এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত বিশ্বের এমন এক রাষ্ট্র যে, সকলেই তার অবস্থানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আশা করব যে, ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে রাশিয়াকে বলবে যে ইউক্রেনের উপর তাদের আগ্রাসনের পদক্ষেপ সম্পূর্ণ ভুল।'
রাশিয়ার ইউক্রেনের উপর আগ্রাসনের বিষয়টি বিশ্বের কাছে চোখ খুলে দেওয়ার মত বলে দাবি হিসারির। বিষয়টি মাথায় রেখে চিন নিয়েও সতর্ক করেছেন তিনি। বলেছেন যে, 'আমরা চিনকে হংকং দখল করতে দেখেছি, আমরা চিনকে তাইওয়ানকে হুমকি দিতে দেখেছি, আমরা দেখেছি সীমান্ত নিয়ে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। তার মানে ওরা কোনও দেশের ন্যায্য সার্বভৌমত্বকে হুঁশিয়ার করছে। চিনের মতো দেশগুলো কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ওদের কোনও মিত্র নেই।'
Read in English