কেন এবারে বাংলাদেশ নির্বাচনে ভারত নিয়ে কিছু বলছেন না কেউ?

সত্যি যদি কোনো ক্ষেত্রে খেলাটা পাল্টে থাকে, তা হলো বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে আসার সময় ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণ। তিন বছরে এই সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে ছিল পাঁচ লক্ষ, ২০১৮ সালে হয়েছে ১৪.৫ লক্ষ।

সত্যি যদি কোনো ক্ষেত্রে খেলাটা পাল্টে থাকে, তা হলো বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে আসার সময় ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণ। তিন বছরে এই সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে ছিল পাঁচ লক্ষ, ২০১৮ সালে হয়েছে ১৪.৫ লক্ষ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কোনোরকম ভারত-বিরোধী প্রচারের ধার দিয়েই যান নি

আজ সকালে শেষ হলো নির্বাচনী প্রচার। আর ৪৮ ঘন্টা পর রবিবার বাংলাদেশে ভোট। মোটামুটি সবই চলছে প্রথা মেনেই, কিন্তু এবার উল্লেখযোগ্যভাবে চোখে পড়ছে না অতীতের ভারত-কেন্দ্রিক প্রচার এবং ভাষণ। এর একটা কারণ সম্ভবত এই যে ভারত "অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন" চাওয়া ছাড়া আর কোনোরকম বিবৃতি জারি করে নি। যা আমেরিকান বা ইউরোপিয়ানরা করেছে।

Advertisment

ঢাকায় অবস্থিত এক ভারতীয় কূটনীতিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "নির্বাচনী প্রচারের সময় ভারতের কোনো উল্লেখই করে নি দুই প্রধান রাজনৈতিক দল। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।" হিজবুত তাহরীর বলে একটি ইসলামী মৌলবাদী সংগঠন একটু আধটু ভারত প্রসঙ্গ তুলেছিল বটে, কিন্তু বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কোনোরকম ভারত-বিরোধী প্রচারের ধার দিয়েই যান নি।

অথচ অতীতের নির্বাচনের সময় দেখা গেছে, বর্তমানে জেলবন্দী নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি হামেশাই শেখ হাসিনার অধীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে "ভারতের পক্ষে" থাকার অভিযোগ তুলত। ওই ভারতীয় কূটনীতিকের বক্তব্য, "আমার ধারণা বিএনপি বুঝতে পারছে, যে ভারতকে দূরে সরিয়ে দিয়ে কারো কোনো উপকার হবে না।"

আরো পড়ুন: বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনী ইস্যু: সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা

Advertisment

প্রাক্তন কূটনীতিক ও খালেদা জিয়ার একসময়ের বিদেশনীতি উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "এখানে এবার ইন্ডিয়া কোনো নির্বাচনী বিষয় নয়। দিল্লিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকবে না বিজেপি, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা থাকা উচিত নয়। একইভাবে, ভারত সরকারেরও মাথাব্যথা থাকা উচিত নয় এই নির্বাচন কে জিতবে তা নিয়ে, আওয়ামী লীগ না বিএনপি।"

এর আগে একাধিক নির্বাচনে বিএনপি ভারত বিরোধী প্রচারের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে, কিন্তু ২০১৪ সালে এই নীতি তাদের বিপক্ষে যায়। সেবার নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি, কিন্তু হাসিনার সরকারকে দিয়ে ফের নির্বাচন করানোর ওপর জোর দেয় নি দিল্লি। উল্টে তাঁর জিতকে স্বাগত জানিয়েছিল। আজও বিএনপির একাংশ মনে করে, ওই পদক্ষেপ নিয়ে "বিরাট ভুল" করেছিল দল।

ভারতের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ নীতিও সেদেশের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। উচ্চতম মহলে ভাবনাচিন্তার আদানপ্রদানের ফল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার মধ্যে দশটি বৈঠক, ছ'টি ভিডিও কনফারেন্স, এবং পাঁচবার টেলিফোনে কথপোকথন হয়েছে। দুই রাষ্ট্রপ্রধান যৌথভাবে ১৯ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন, এবং ৯০ টির বেশি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞান, ইনফরমেশন টেকনোলজি, ইলেকট্রনিকস, সাইবার সুরক্ষা, এবং অসামরিক পরমাণু শক্তির মতো অপেক্ষাকৃত নতুন কিছু ক্ষেত্রে।

আরো পড়ুন: নদীপথে যুক্ত হতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ, সৌজন্যে ত্রিপুরা

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ২৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সাজিয়ে বাংলাদেশের দরজায় হাজির হতেই নয়া দিল্লিও নড়েচড়ে বসে ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম ভারতের কোনো প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ৮০ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করে। গত তিন বছরে বাংলাদেশকে ভারতের উন্নয়ন খাতে সাহায্যের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট বিলিয়ন ডলারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩১.৫ শতাংশ বেড়ে সাত বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.৩ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "আমার মতে শেখ হাসিনা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে ভূরাজনীতি পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে সমস্ত বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।"

কিন্তু সত্যি যদি কোনো ক্ষেত্রে খেলাটা পাল্টে থাকে, তা হলো বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে আসার সময় ভিসা প্রক্রিয়ার সহজীকরণ। তিন বছরে এমন নাগরিকের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে  সংখ্যা ছিল পাঁচ লক্ষ, ২০১৮ সালে তা হয়েছে ১৪.৫ লক্ষ। "বাংলাদেশে আর্থিক সঙ্গতি বেড়েছে অনেকেরই, ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এঁদের মধ্যে বহু মানুষ কলকাতা যাচ্ছেন শপিং করতে, বা স্রেফ উইকেন্ডে 'পাব হপিং' করতে," জানাচ্ছেন এক ভারতীয় কূটনীতিক।

হিংসা ও উত্তেজনার আবহে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন সম্বন্ধে দিল্লির সরকারি অবস্থান হলো, এটি বাংলাদেশের "অভ্যন্তরীণ বিষয়"। যদিও ফলাফল নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। পরিশেষে শুধু একটি তথ্য: ভারত থেকে তিনজন পর্যবেক্ষক নির্বাচন চলাকালীন বাংলাদেশে যাচ্ছেন।

Sheikh Hasina Bangladesh